উত্তরপ্রদেশে একাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: পিটিআই।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)নিয়ে বিক্ষোভের জেরে এ বার উত্তরপ্রদেশ এবং কর্নাটকের একাধিক জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হল। বিক্ষোভ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্যই উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপাতত শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ দিকে, শুক্রবার সকালে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দিল্লিতেও। শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অমিত শআহের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন মহিলা কংগ্রেসের অনেকে। আটক করা হয়েছে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়কেও।
গতকাল বিক্ষোভ চলাকালীন লখনউয়ের মাদেগঞ্জে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বাধে। সেইসময় একটি পুলিশ ফাঁড়ির বাইরে একাধিক গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। সম্ভলে আক্রান্ত হয়েছে একটি থানাও। জ্বালানো হয়েছে সরকারি বাস। এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে। এই হিংসাত্মক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যার মধ্যে লখনউতে ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সম্ভল থেকে। মৌ , বারাণসী, আলিগড় এবং প্রয়াগরাজ থেকেও বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট ১৯টি এফআইআর দায়ের হয়েছে লখনউয়ে। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ শফিকুর রহমান এবং ফিরোজ খান নামের দলের আর এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আটক শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকালই উত্তরপ্রদেশের সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল। এ দিনও তা জারি রয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে লখনউ, গাজিয়াবাদ, পিলভিট, সম্ভল, বরেলী এবং মেরঠের একাধিক জেলায়। সেখানে এসএমএস পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি চত্বর সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে লাল সতর্কতা জারি করেছেন জেলাশাসক চন্দ্রভূষণ সিংহ। ১০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী নামানো হয়েছে। এ ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে ৪ কোম্পানি র্যাফ। আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চলবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অতিরক্ত স্বরাষ্ট্র মুখ্যসচিব অবিনাশ অবস্থি।
অন্য দিকে, মেঙ্গালুরুতে তিনটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলকে সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য গতকাল রাত ১০টা থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে সেখানে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ, মেঙ্গালুরু ছাড়াও, ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে চেন্নাইয়েও। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় সেখানে ৬০০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। অভিনেতা সিদ্ধার্থ, সঙ্গীতশিল্পী চিএ কৃষ্ণ এবং রাজনীতিক তিরুমাভালাভনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে।
এ দিকে, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখানোয় মহিলা কংগ্রেসের বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির ১২টি থানা এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এ দিন সকালে সেখানে ফ্ল্যাগ মার্চও করে পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলার দিকে নজর রাখতে ড্রোন নামানো হয়েছে। চাওরি বাজার, লাল কেল্লা এবং জামা মসজিদ, এই তিনটি মেট্রোর গেট বন্ধ রাখা হয়েছে।