আর তিন দিন পরে গুয়াহাটিতে বর্ষপূর্তির উৎসব শুরু করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তার আগে সেই গুয়াহাটিতেই মোদী সরকারের ‘ফানুস’ ফাটিয়ে দিল সঙ্ঘের সংগঠন।
গুয়াহাটিতে সঙ্ঘের সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের দু’দিনের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তাতে বলা হয়েছে দেশের বৃদ্ধির প্রথা বদলে তার হার ৭.১ শতাংশ হারে দেখানো হচ্ছে বটে। কিন্তু রোজগার বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ হারে। এটি একটি শোচনীয় অবস্থা। তার উপর তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে বড় মাত্রায় কাজ হারাচ্ছেন কর্মীরা। বন্ধ থাকা প্রকল্পও এখনও শুরু হয়নি। ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ)-র সমস্যাও এখনও মেটেনি। নোট বাতিলের পর ব্যাঙ্কের কাছে অনেক অর্থ এসেছে বটে, কিন্তু সেই তুলনায় ঋণ বাড়ছে না। বিনিয়োগও থমকে গিয়েছে।
মোদী সরকারের তিন বছরের মুখে রোজগার দিতে না পারা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। রাহুল গাঁধীরা বার বার বলছেন, ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদী ফি-বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু খোদ তাঁর সরকারের শ্রম মন্ত্রকের রিপোর্টই বলছে, ১ লক্ষের কিছু বেশি চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। আর নোট বাতিলের পর তো রোজগার খুইয়েছেন অনেকে। এই অস্বস্তি ঢাকতে নরেন্দ্র মোদী ক’দিন আগেই নীতি আয়োগের অধীনে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন। যাদের কাজ দেশে রোজগারের শুমারি নতুন করে করা। কিন্তু আরএসএসের সংগঠন সরকারের সেই দুর্বল জায়গাতেই আঘাত হানল।
সঙ্ঘ সূত্রে খবর, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানাতেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ-সহ নানা বিষয়ে সরকারের নানা নীতি নিয়ে রীতিমতো বেগ দিত ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’। মোদী জমানায় অত চড়া সুরে বিরোধিতা করছে না তারা। কিন্তু প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলে দেওয়া এবং অন্য বেশ কিছু বিষয়ে মোদী সরকারের নীতিতে তারা খুশি নয়। সরকারের তিন বর্ষপূর্তির উৎসবের সময়ে তাই নিজেদের মূল্যায়ন সামনে এনেছে তারা। আবার এ ভাবে ঘরের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের সমালোচনার জোরও কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন সঙ্ঘ নেতাদের একাংশ।
কংগ্রেসের নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘বিরোধীরা যখন অভিযোগ করে, তখন বিজেপি সেটি উড়িয়ে দেয়। কিন্তু তাদের ঘরের লোকই একই আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। তার কী জবাব দেবেন মোদী?’’ তিন বর্ষপূর্তির উৎসবের সময়ে রোজগারের প্রশ্নটি যে আসবে, সেটি মাথায় রেখেই অমিত শাহ সম্প্রতি দলের নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। সেখানে নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি জানিয়েছেন, এই প্রশ্ন এলেই বিজেপিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে মুদ্রা যোজনার কথা। এই যোজনার অধীনে সাত কোটি মানুষ ঋণ নিয়েছেন। অমিত শাহ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী কখনওই বলেননি, ২ কোটি চাকরি দেবেন। ১২৫ কোটির দেশে সেটি সম্ভবও নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে স্বরোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। সেটিও রোজগার।’’