উত্তরপ্রদেশে বড় জয় বিজেপি-র
ভোটের দশ দিন আগে লখিমপুর খেরির নিহাসন গ্রামের বাড়িতে বসে পবন কাশ্যপ একের পর এক চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। গত বছর লখিমপুরে খুন হওয়া কৃষক-সাংবাদিক-শিক্ষক এবং এলাকায় সমাজসেবার জন্য প্রবল জনপ্রিয় রমন কাশ্যপের ভাই পবন। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের ফলাফলের পর তিনি একেবারেই চুপ। দিল্লি থেকে যোগাযোগ করা হলে বললেন, ‘‘যা ফলাফল হয়েছে আপনারা দেখেছেন। আমার এই নিয়ে এখন কিছুই বলার নেই। দয়া করে আমাকে আর এ সবের মধ্যে জড়াবেন না।’’
শুধু লখিমপুর খেরিই নয়। ২০২০ সালে দলিত কিশোরীকে নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনায় গোটা বিশ্বে কুখ্যাত হয়ে যাওয়া হাথরস, উন্নাওয়ে কিশোরী নির্যাতনের অভিযোগে সেখানকার বিজেপি বিধায়কের যাবজ্জীবন সাজা...। একের পর এক সামাজিক শোষণের ঘটনা এ বারের উত্তরপ্রদেশ ভোটে বিজেপিকে চাপে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল গোটা রাজ্যে তো বটেই, এমনকি উন্নাও-হাথরসেও এ সবের প্রভাব পড়েনি ভোটে। উন্নাওয়ে রাজনৈতিক ফায়দা কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী নির্যাতিতার মাকে প্রার্থীও করেছিলেন। কিন্তু ভোটে তার সুফল পাওয়া দূরস্থান, প্রায় মুছে গিয়েছে কংগ্রেস।
জয়ের পর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই উল্টে স্ত্রীশক্তির জয়গান গেয়েছেন। বলেছেন, ‘‘যেখানে যেখানে মহিলা ভোটাররা বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন সেখানে বিজেপি বাম্পার ফল করেছে!’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় অনেকেই পরামর্শ দিতেন সাবধানে চলাফেরা করার জন্য। আমি তাঁদের বলতাম, আমার কিছু হবে না। স্ত্রীশক্তির কবচ আমায় ঘিরে রেখেছে!’’ রাজনৈতিক সূত্রের মতে এই বক্তব্যগুলি থেকে স্পষ্ট, উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী যতই মহিলাদের জন্য ইস্তেহার তৈরি করুন না কেন, বামা-প্রশ্নে শেষ হাসি হেসেছে বিজেপিই। শুধু বিতর্কিত এলাকাগুলি নয়, গোটা উত্তরপ্রদেশের ফলাফল থেকেই স্পষ্ট যে, মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, উত্তরপ্রদেশের মহিলারা দলে দলে পদ্মে ছাপ দিলেন কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যোগী জমানায় সাধারণ ভাবে রাস্তাঘাটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে, যা রাজ্যের মহিলাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। হাথরস বা উন্নাওয়ের মতো ঘটনা ঘটলেও মোটের উপর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে গত পাঁচ বছরে। পাশাপাশি কোভিডের সময় বাড়ি বসে খাদ্যশস্য পাওয়ার বিষয়টিও গৃহিণীদের কাছে স্বস্তিদায়ক হয়েছে। সরকারি বেশ কিছু যোজনার লাভ সরাসরি পৌঁছেছে গৃহকর্ত্রীর কাছে।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার ভোট বিশ্লেষণ করেও দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থন ছাড়া ওই পরিমাণ ভোট পাওয়া বিজেপির পক্ষে সম্ভব ছিল না। মনে করা হচ্ছে, বহু ক্ষেত্রে মুসলমান পুরুষ এসপি-কে ভোট দিলেও মুসলমান মহিলাদের একাংশ চুপচাপ বিজেপিকে ভোট দিয়ে এসেছেন। কেন্দ্রীয় যোজনা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি বিজেপি সরকারের তিন তালাক নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপও কাজে লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে।