—ফাইল চিত্র।
‘‘উত্তরপ্রদেশে বিজেপি জিতলে আমরা কী করব?’’
সাতসকালেই বিরক্ত দেখায় রাকেশ টিকায়েতকে। দিল্লির সীমানায় কৃষক আন্দোলনে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয়ের অন্যতম মুখ। নরেন্দ্র মোদী-যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপিই যে ক্ষমতায় আসছে, তা টের পেয়ে টিকায়েত বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন দুর্বল ছিল না।’’
এক বছরের কৃষক আন্দোলনের চাপে নরেন্দ্র মোদীকে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। ফলে আন্দোলনের জোর আগেই প্রমাণিত। কিন্তু কৃষকদের আন্দোলন রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে কি না, তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠে গেল।
উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনের ফল বলছে, কৃষকদের ক্ষোভ বা সমস্যা এখনও রাজনীতির দিশা নির্দেশ করতে অক্ষম। যার প্রমাণ, যে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ থেকে কৃষকরা দিল্লির সীমানায় আন্দোলন করেছিলেন, সেই জাঠ বলয়েও বিজেপি ভাল ফল করেছে। উত্তরাখণ্ডের কৃষকরাও আন্দোলনে ছিলেন। সেখানেও বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসছে। সংযুক্ত কিসান মোর্চা বিজেপিকে শিক্ষা দেওয়ার ডাক দিলেও লাভ হয়নি।
সর্বোপরি কৃষক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি চাষিদের ক্ষোভের ফায়দা তুলেছে। দিল্লির সীমানায় আন্দোলনে বসে থাকা চাষিদের আম আদমি পার্টির সরকার নীরবে নানা সাহায্য করেছিল। সেই চাষিদের মুখে মুখেই পঞ্জাবের গ্রামে দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারের কাজের খবর ছড়িয়েছে। কিন্তু কৃষক নেতারা পঞ্জাবে নিজেরা দল করে ভোটে লড়তে গিয়ে ধরাশায়ী হয়েছেন। আন্দোলনের অন্যতম নেতা বলবীর সিংহ রাজেওয়াল সংযুক্ত সমাজ মোর্চা নামের দল গড়ে ভোটে লড়েছিলেন। সামরালা আসনে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটের সময় কৃষক পরিচিতি নয়, জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের পরিচিতি যে বড় হয়ে ওঠে, তা আরও একবার প্রমাণিত। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ফল বলছে, জাঠ বলয়ের চাষিরা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সরব হলেও, ভোটের সময় জাঠদের বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। যোগী আদিত্যনাথের জমানায় গোরক্ষাই প্রধান হয়ে ওঠায়, বেওয়ারিশ গরু-বলদের পাল ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে চাষিদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু সেই
সমস্যাকে পিছনে রেখে চাষিদের অনেকেই যোগী আদিত্যনাথকে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধার জন্য ভোট দিয়েছেন। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, ভোটের হাওয়া ওঠার ঠিক আগেই মোক্ষম সময়ে নরেন্দ্র মোদীর কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও কাজ দিয়েছে।
কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা হান্নান মোল্লার যুক্তি, কৃষক আন্দোলন বিজেপিকে সমস্যায় ফেলতে না পারলেও বেগ দিয়েছে। কৃষকদের ভোটের জন্যই এসপি-র ভোট যেখানে গ্রামে ১১ শতাংশ, আধা-গ্রামীণ এলাকায় ৯ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে বিজেপির ভোট বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ হারে। তবে শহর, মফস্সল এলাকায় বিজেপির ভোট অনেক বেশি বেড়েছে। কৃষক ছাড়া অন্যান্য পেশার মানুষ বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। সংযুক্ত কিসান মোর্চা বিধানসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, ১৪ মার্চ বৈঠকে সব রাজ্যের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হবে।
দিল্লির সীমানায় কৃষকদের আন্দোলন এসে পৌঁছনোর আগে পঞ্জাবে তিন কৃষি আইনের বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। প্রথম থেকেই কৃষক নেতারা আন্দোলনকে অরাজনৈতিক রাখতে চেয়েছিলেন। তাঁরা বিজেপিকে শিক্ষা দেওয়ার ডাক দিলেও নিজেরা ভোটে লড়তে যাননি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন পঞ্জাবের নেতা বলবীর সিংহ রাজেওয়াল। তিনি নিজের দল গড়ে ভোটে ধরাশায়ী হয়েছেন। কৃষক নেতাদের বক্তব্য, রাজেওয়ালের ভোটে লড়ার সিদ্ধান্তে এই কারণেই বাকিরা আপত্তি করেছিলেন। কারণ, রাজেওয়াল হারলে বিজেপি বলার সুযোগ পেয়ে যাবে, আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাব নেই।
সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীনই অমিত শাহ বলেছিলেন, কৃষক আন্দোলনের কথা কৃষকদেরই মনে নেই। বিরোধীরাও ভুলে গিয়েছেন। আজ উত্তরপ্রদেশ জয়ের পরে বিজেপি নতুন করে দাবি তুলল, চাষিরা নরেন্দ্র মোদীরই পাশে রয়েছেন।