আফজ়ল গুরু। —ফাইল চিত্র।
প্রতি বছরই ‘পালিত’ হত দু’জনের মৃত্যুদণ্ডের বার্ষিকী। তা নিয়ে রক্তচাপ বাড়ত জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন তথা কেন্দ্রের। কিন্তু চলতি বছরে মকবুল বাট ও আফজ়ল গুরুর মৃত্যুদণ্ডের বার্ষিকী নিয়ে কার্যত কোনও আলোচনাই শোনা গেল না উপত্যকায়। ফলে উপত্যকার রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
জঙ্গি সংগঠন জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মকবুল বাটের ফাঁসি হয় ১৯৮৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। ২০০১ সালের সংসদ হামলার মামলায় ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসি হয় আফজ়ল গুরুর। প্রতি বছরেই এই দু’জনের মৃত্যুদণ্ডের বার্ষিকী ‘পালন’ করতেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একাংশ। কিন্তু চলতি বছরে এ নিয়ে তেমন কোনও আলোচনা বা উদ্যোগ দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কাশ্মীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কড়া সরকারি নজরদারিও এর কারণ হতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে সরকার কাশ্মীরে নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। প্রয়োজনে বারবার বন্ধ রাখা হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে মিছিল-জমায়েতের আয়োজন করা কঠিন হয়েছে।
পাশাপাশি রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথাও মানছেন অনেকে। তাঁদের মতে, নতুন প্রজন্ম পুরনো মতবাদেই বিশ্বাস করবে এমন কোনও কথা নেই। নবীন প্রজন্মের সদস্যেরা হয়তো নিজেদের কথা বলতে নতুন পথ খুঁজছেন।
অন্য দিকে জম্মু-কাশ্মীরে দেশ-বিরোধী কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করলে ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করল পুলিশ।
সম্প্রতি পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে সুড়ঙ্গ কেটে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি, বিস্ফোরক ও মাদক পাচারের চেষ্টা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ভারতীয় বাহিনী। এই ধরনের সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়ে খবর দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
ড্রোনের মাধ্যমেও পাকিস্তান থেকে মাদক, অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচারের চেষ্টা চলছে। এমন ড্রোন সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করলে দেওয়া হবে ৩ লক্ষ টাকা। ড্রোনের মাধ্যমে আসা অস্ত্র বা মাদক সংগ্রহ করে পঞ্জাবে পাচার করছে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য দিলেও ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। তবে তদন্তে সেই তথ্যের সত্যতা প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, আন্তঃরাজ্য মাদক পাচার মডিউল ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। একই পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে পাকিস্তানি জঙ্গি হ্যান্ডলার বা জেলবন্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কারা কথা বলছে তা জানালে।
জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকদের পুলিশের চর হিসেবে চিহ্নিত করে হত্যা করছে জঙ্গিরা। এই ধরনের ব্যক্তিহত্যার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে সব তথ্য থাকে জঙ্গিদের হাতে। হত্যা করা হচ্ছে ছুটিতে থাকা পুলিশকর্মীদেরও। এই ধরনের তথ্য কারা পাকিস্তান বা জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে তুলে দিচ্ছে তা জানালে ২ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবে পুলিশ।
মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল বা কলেজে কারা দেশ-বিরোধী কাজে বা জঙ্গি দলে যোগ দিতে প্ররোচনা দিচ্ছে তা জানালে ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবে পুলিশ।
সূত্রের খবর, পুঞ্চ-রাজৌরি এলাকায় বাহিনীর উপরে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পরে জঙ্গিদের নাগাল পাওয়া যায়নি। তাই জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য পেতে পুরস্কার ঘোষণা
করা হয়েছে।