গেরস্থের দেরাজে টাকা নেই। তাই আপাতত ছুটিও নেই টাকশালে।
নোট বাতিলের ফরমানের পর থেকে হপ্তা দুয়েক ধরে প্রায় প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা (৮ ঘণ্টার তিনটি শিফ্ট) নোট ছেপে চলেছে শালবনি টাঁকশাল। বাদ ছিল শুধু রবিবারটুকু। দেশজুড়ে নোটের আকালে সেই ছুটিও এখনকার মতো বাতিল। আজ দিনভর নোট ছাপার কাজ হচ্ছে সেখানে। নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই রুটিন আপাতত বহালও থাকবে।
টাঁকশাল সূত্রের খবর, শীগ্গির সেখানে ছাপা শুরু হতে পারে ৫০০ টাকার নোট। ব্যাঙ্ক-এটিএমে যার জন্য হাপিত্যেশ করে প্রায় রোজ ধর্না দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
মেদিনীপুরের এই টাঁকশালের এক কর্মীর কথায়, ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নোট নাকচের কথা ঘোষণা করার পরে আজই প্রথম রবিবার, যে দিন দরজা খোলা থাকছে এই টাঁকশালের। তা-ও আবার ২৪ ঘণ্টা। তবে এ নিয়ে কর্মীদের ক্ষোভ নেই। বরং তাঁরা বলছেন, ‘‘নোটের জোগান কম। মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। বেশি কাজ তো করতেই হবে।’’ তাঁরা শুনেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত এখন রবিবারও কাজে আসতে হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শালবনি নোট মুদ্রণ প্রাইভেট লিমিটেডের স্থায়ী কর্মচারী সংগঠনের সহ-সভাপতি নেপাল সিংহ বলেন, “রবিবারেও কাজ হবে বলে কর্মীদের জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাতে কারও আপত্তি নেই।” অস্থায়ী কর্মী সংগঠনের সম্পাদক বিপুল বিশুই বলেন, “ছুটির দিনে কাজের ক্ষেত্রেও কর্মীরা সব রকম সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।” উল্লেখ্য, এই টাঁকশালে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০ ও ৫৫০ জন। বেশির ভাগ সময় দু’টি শিফটে কাজ হয়। অর্থাৎ, ৮ ঘণ্টা করে ১৬ ঘণ্টা। জরুরি ভিত্তিতে নোট ছাপা হয়
তিনটি শিফ্টে।
টাঁকশালের এক কর্মী বলছিলেন, মোটামুটি সেপ্টেম্বর থেকে ছাপা হচ্ছে বলে ২০০০ টাকার নোট নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য আগে থেকে তা করা সম্ভব না হওয়ায়, আকাল বরং পাঁচশোর নোটের। তাঁর দাবি, নতুন পাঁচশোর নোট এখনও শালবনি থেকে ছাপা হয়নি। কিন্তু আগামী সপ্তাহ থেকে সেই কাজ শুরু হতে পারে। ওই নোটের মাপ, নকশা ইত্যাদি চলেও এসেছে।
এর আগে, ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন বেফি সূত্রেও জানা গিয়েছিল যে, শালবনিতে নতুন ৫০০ টাকার নোট ছাপার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তবে তাঁদের মতে, টাকা ছাপানোর পরে বাজারে তা আসতে ২০-২২ দিন লাগে। ফলে শালবনিতে ছাপা নতুন পাঁচশোর নোট বাজারে আসতে আগামী মাসের অর্ধেক গড়িয়ে যাবে।
দেশে টাঁকশাল ৪টি:— নাসিক (মহারাষ্ট্র), দেওয়াস (মধ্যপ্রদেশ), মহীশূর (কর্নাটক) আর শালবনি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছিল, দু’শিফ্টে কাজ হলে চার জায়গা মিলিয়ে মোট নোট ছাপা যায় বছরে ২,৬৬৬ কোটি। তিন শিফ্টে প্রায় ৪,০০০ কোটি। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া হিসেব বলছে, শুধু পুরনো সব পাঁচশো পাল্টে দিতেই নতুন নোট লাগবে প্রায় ১,৫৭৯ কোটি।
চার টাকশালেই তিন শিফ্টে শুধু ৫০০-র নোট ছাপলে, ১,৫৭৯ কোটি নোট ছাপতে সময় লাগবে প্রায় ৫ মাস। আর যদি অন্যান্য নোট ছাপার জন্য ২০% সময় সরিয়ে রাখতে হয়, তাহলে প্রায় ৬ মাস!
অথচ এই পাঁচশোর নোট পর্যাপ্ত সংখ্যায় না আসা পর্যন্ত শুধু একশো বাজারের চাহিদা সামলে উঠতে পারছে না। বর্তমান চাহিদার তুলনায় তার জোগান নস্যি। আবার পাঁচশো না-এলে, দু’হাজারের নোটও নিতে চাইছেন না কেউ। কালঘাম ছুটছে তা ভাঙানোর উপায় খুঁজতে।
এখন ছুটি ভুলে সম্ভবত সেই পাঁচশোর নোট ছাপার জন্য দিন-রাত এক করতে তৈরি হচ্ছে শালবনি।