প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘পাকিস্তান কূটনীতি’-কে খোলামেলা সমর্থন করলেন রাজনীতিতে তাঁর চির-প্রতিদ্বন্দ্বী তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। পঠানকোট কাণ্ডের পর মোদীর পাকিস্তান-নীতি দেশের বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে। সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আজ পটনায় নীতীশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তান যাত্রা একদম সঠিক পদক্ষেপ। দু’দেশের সম্পর্ক ভাল করার জন্য, ওখানকার গণতান্ত্রিক শক্তি যাতে মজবুত হয় সেটা দেখা জরুরি।’’
মোদী-কূটনীতিকে নীতীশের সমর্থন যতখানি না অবাক করার ঘটনা, তার থেকেও বড় ঘটনা রাজ্য-রাজনীতির অন্যত্র। মোদীর এই হঠাত্ পাকিস্তান সফর নিয়ে সমালোচনায় মুখর নীতীশের দুই জোট-সঙ্গী। মুখর কংগ্রেস, মুখর লালুপ্রসাদ। নীতীশ মুখ খোলার ঘণ্টাখানেক আগেই দলীয় দফতরে লালুপ্রসাদ মোদীর পাকিস্তান-নীতির কড়া সমালোচনা করেন। পাকিস্তান ও পঠানকোট হামলা প্রসঙ্গ তুলে লালু বলেন, ‘‘ওঁর হাতে দেশ সুরক্ষিত নয়। ওনাকে জবাব দিতেই হবে। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কথা মোদী বলে থাকেন। এখন চুপ কেন?’’ এর পরেই লালুর কটাক্ষ, ‘‘জানি না পাকিস্তানে গিয়ে কী কথা বলেছেন! কী বিরিয়ানি খেয়েছেন!’’ তার পরেই সাংবাদিকরা নীতীশকে চেপে ধরেন। জানান, লালুপ্রসাদ এই এই বলেছেন।
লালুপ্রসাদ কী বলেছেন সে কথায় বিশেষ আমল না দিয়ে নীতীশ মোদীর পাকিস্তান-কূটনীতির সমর্থনে এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে বিবদমান বিষয়গুলি মেটাতে এই সফর সাহায্য করবে।’’ বিভিন্ন মহলে প্রচার, আগে থেকেই ঠিক করে নরেন্দ্র মোদী লাহৌরে নামেন। নীতীশের বক্তব্য, ‘‘যদি আগে থেকেও প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়ে থাকে, তাতেও কিন্তু কোনও সমস্যা নেই।’’ বিরোধীদের সমালোচনা? নীতীশের জবাব, ‘‘যখনই হাত মেলানো হবে, তখনই কিছু শক্তি এর বিরুদ্ধে যাবে। সেই শক্তিগুলি দু’দেশের ভাল সম্পর্ক চায় না।’’ উল্লেখ্য, তত্কালীন বাজপেয়ী সরকারের রেলমন্ত্রী নীতীশ কুমার বরাবরই অটলবিহারী বাজপেয়ীর ‘ফ্রন্টফুট ডিপ্লোম্যাসি’-র পক্ষে সরব ছিলেন। গোটা বিষয়টির সঙ্গে রাজনীতির যে কোনও সম্পর্ক নেই আজও সেটা ‘কূটনীতিক’ নীতীশ জানাতে ভোলেননি।
তবে রাজ্যের মহাজোট সরকারের দুই প্রধান নেতার কথার এই ফারাক নিয়ে ইতিমধ্যেই বিহার রাজনীতিতে জলঘোলা হতে শুরু করেছে। রাজনীতির নিক্তিতে কূটনীতির পরিমাপ শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও মহল থেকে বিষয়টিকে হাতিয়ার করে নীতীশ ও লালুপ্রসাদের মধ্যের দূরত্ব মাপার কাজও শুরু হয়েছে।
আরজেডির এক নেতা আজ জানান, ‘‘আগামী ১৫ জানুয়ারি দলীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হবে। তার পরেই নরেন্দ্র মোদীর পাকিস্তান নীতি ও পঠানকোট কাণ্ড নিয়ে আক্রমণ আরও জোরদার করা হবে। কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হবে দল। জেডিইউ শিবির অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা দুটো দল। সরকার গড়লেও বিদেশ নীতি প্রসঙ্গে যে একই দৃষ্টিভঙ্গি হবে তেমন মনে করারও কোনও কারণ নেই।’’ তবে তাঁর মতে, ‘‘বিদেশ নীতি প্রসঙ্গে নীতীশের বক্তব্য অনেক বেশি পরিপক্ক।’’