শব্দ ব্রহ্ম! আর সেই শব্দের প্রয়োগ নিয়েই নরেন্দ্র মোদীকে ঘায়েল করতে মাঠে নেমেছেন নীতীশ কুমার। নীতীশের ‘ডিএনএ’ খারাপ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এ হেন শব্দ প্রয়োগকে ‘অপমানসূচক’ বলে আখ্যা দিয়ে তাঁকেই ‘খোলা চিঠি’ দিলেন নীতীশ।
‘খোলা চিঠি’টি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, বিহারে পরের সভায় এসে তিনি যেন তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। দিল্লিতে আজ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শব্দ প্রত্যাহার করুন বা না করুন, আগামী ৯ অগস্ট গয়ার সভায়
নরেন্দ্র মোদী এই প্রসঙ্গটি নতুন করে উত্থাপন করবেন। যা উত্তর দেওয়ার দেবেন। অর্থাত্ বিহারের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে মোদী-নীতীশ দ্বৈরথ আরও জমজমাট হওয়ারই লক্ষণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
গত ২৫ জুলাই বিহারের মুজফ্ফরপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন। নাম না করে বলেছিলেন, নীতীশ কুমারের ‘ডিএনএ’ খারাপ। প্রধানমন্ত্রী পরের লাইনেই বলেছিলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক রাজনীতির ডিএনএ খারাপ।’’ যে অর্থেই প্রধানমন্ত্রী ওই বক্তব্য রাখুন না কেন, বিহারের রাজনীতিতে সেই লাইনটিকেই ব্যবহার করতে চাইছেন নীতীশ কুমার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপনার ওই বক্তব্যে আমি এবং বিহারের একটি বড় অংশের মানুষ আহত, অপমানিত হয়েছি।’’
চলতি মাসেই বিহারের তিনটি এলাকায় তিনটি সভা করবেন নরেন্দ্র মোদী। আগামী ৯ অগস্ট গয়াতে সেই সভার প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। মোদীর সভা নিয়ে কিছুটা হলেও চাপে রয়েছে শাসক জনতা জোট। মুজফ্ফরপুরের সভায় কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল বলে বিজেপির দাবি। সেই সংখ্যা নিয়ে কিছুটা হলেও কপালে ভাঁজ পড়েছে নীতীশ কুমারের। দিন কয়েক আগে, এবিপি-নিয়েলসেন জনমত সমীক্ষায় বলা হয়, ‘ত্রিহুত অঞ্চলের’ মোট ৭২টি আসনের মধ্যে ৩৮টি আসনে এগিয়ে রয়েছে লালু-নীতীশের জনতা জোট। কিন্তু মুজফ্ফরপুরের সভার ভিড় দেখার পর অনেকেই সেই ফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
রাজ্য বিজেপি মহলের মতে, পাঁচ বছর আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সে সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী, নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যাহ্ন ভোজে ডেকেও পরে তা বাতিল করেন রাজ্যের তত্কালীন শাসক, এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। সেই প্রেক্ষিতেই ‘ডিএনএ’ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মোদী। লোকসভা নির্বাচনে ওই বিষয়টি প্রচার করে ভালই রাজনৈতিক লাভ হয়েছিল বিজেপির। বিধানসভা নির্বাচনেও ‘ডিএনএ’ কাজ করতে পারে বলে আশাবাদী বিজেপি। সে কারণেই নিজের অপমানের সঙ্গে বিহারের অপমানকে জড়িয়ে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন নীতীশ কুমার।
নীতীশ কুমার লিখেছেন, ‘‘আমি বিহারের ছেলে। সেই অর্থে আমার আর বিহারের লোকেদের একই ডিএনএ। মোদীজি আপনি জানেন বোধহয়, আমার বাবা এক জন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, আর মা ছিলেন গৃহবধূ। আমি গ্রামের সাধারণ পরিবেশে বড় হয়েছি। চল্লিশ বছর ধরে গাঁধী-লোহিয়া-জেপির দেখানো
পথে চলার চেষ্টা করেছি। নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি।’’ এর আগে নিতিন গডকড়ীও ‘বিহারের ডিএনএতে জাতিবাদ রয়েছে’ বলে মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করেন। চিঠিতে তারও উল্লেখ করেন নীতীশ।
নীতীশের এই আক্রমণ প্রতিহত করতে আসরে নেমেছেন বিজেপি তথা এনডিএ নেতৃত্ব। বিহারের সাধারণ মানুষের উদ্দেশে আজই পাল্টা ‘খোলা চিঠি’ লিখেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বিহার মানেই নীতীশ নয়, আর নীতীশ কুমার মানেই বিহার নয়।’’ তাতে বলা হয়েছে, ‘‘বিহারের মানুষ সুশাসন আর উন্নয়ন চায়। জঙ্গলরাজ বা ইগোর লড়াই চায় না।’’
তাঁদের দাবি, নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক জীবন অহঙ্কার, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ষড়যন্ত্রের উপরে নির্ভর করেই তৈরি হয়েছে। নীতীশের প্রতি তাঁদের কটাক্ষ, নভেম্বর মাসের পর থেকে চিঠি লেখার জন্য প্রচুর সময় পাবেন নীতীশ। কারণ ভোট হয়ে গেলে পরাজিত নীতীশের হাতে থাকবে অঢেল সময়। চিঠিতে
স্বাক্ষর করেছেন বিজেপির সুশীল মোদী এবং সিপি ঠাকুর, লোকজনশক্তি পার্টির নেতা রামবিলাস পাসোয়ান, হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চার জিতনরাম মাঁঝি এবং লোক সমতা পার্টির উপেন্দ্র কুশওয়াহা।