নীতীশ কুমার
মদের উপর নিষেধাজ্ঞার জেরে কোনও থানার ভার নিতে চাইছেন না পুলিশ অফিসাররা। অন্য দিকে, প্রশাসন গ্রামকে গ্রাম জরিমানা করায় গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বহু পরিবার। সব মিলিয়ে বিব্রত বিহার, বিব্রত নীতীশ কুমার। বোঝানো হচ্ছে গ্রামবাসীদের। তবে ‘বেয়াড়া’ পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতায় রাজি নন নীতীশ। বরং তিনি আজ এক অনুষ্ঠানে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দায়িত্ব নিতে যাঁরা অপারগ, তাঁদের জন্য দরজা খোলা আছে। চাকরি ছেড়ে দিন।’’
গোলমালের শুরু গত সপ্তাহে। তাঁদের থানা এলাকায় আবগারি দফতর মদ উদ্ধারের পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই রাজ্যের ১১টি থানার ওসিকে দশ বছরের জন্য সাসপেন্ড করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি প্রমোদ কুমার ঠাকুর। এরপরেই জোটবদ্ধ হন নিচু তলার পুলিশ অফিসাররা। সাসপেন্ড হওয়া অফিসারদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাঁদের সংগঠন। রাজ্য পুলিশের প্রায় ২০০ জন ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টর থানার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন। গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে তাঁরা রাজ্য পুলিশের ডিজি প্রমোদ কুমার ঠাকুরকে জানিয়েও দিয়েছেন।
যে ওসিদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁদের এলাকা থেকে অবৈধ মদ উদ্ধার করেছিল আবগারি বিভাগ। এরপরেই বিহার পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন গোটা ঘটনার প্রতিবাদে নামে। কোনও কারণ ছাড়াই ওই অফিসারদের সরানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। থানার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়ে অনেক অফিসার পুলিশ কর্তাদের কাছে মৌখিক ভাবেও আবেদন করেছেন। তাঁদেরই একজনের বক্তব্য, ‘‘এলাকায় মদ পাওয়া গেলে দশ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তারা। এলাকায় মদ পাওয়া যাবে না, এমন গ্যারান্টি আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই থানার দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের গায়ে কালি লাগাতে চাই না।’’
এরই পাশাপাশি, গ্রামে মদ মেলায় গ্রামকে গ্রাম জরিমানা করার খবরও আসছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নিজের জেলা, নালন্দার ইসলামপুর ব্লকের কৈলাসপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার জরিমানার জেরে গ্রাম ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন। কয়েক দিন আগে জেলা শাসক ত্যাগরাজন গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে জমিরানা করেন। জেলাশাসকের যুক্তি, ‘‘গ্রাম থেকে প্রায়ই মদ পাওয়া যাচ্ছিল। গ্রামের বাসিন্দারা জড়িত না থাকলে এটা সম্ভব নয়। তাই গ্রামের সমস্ত পরিবারকে জরিমানা করা হয়েছে।’’ গ্রামবাসীরা প্রশাসনের এই ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বাসিন্দাদের বেশির ভাগই অতি পিছড়ে বর্গভুক্ত বেলদার সম্প্রদায়ের মানুষ। মূলত মাটির সামগ্রী ও ইট তৈরি করে থাকেন বেলদার সম্প্রদায়ের লোকেরা। ভূমিহীন এই সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের পক্ষে পাঁচ হাজার টাকার জরিমানা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এই পরিস্থিতিকে নীতীশ রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রামবাসীদের বোঝানোর কাজ শুরু করেছে প্রশাসন ও শাসক দল।
তবে রাজ্য পুলিশ অফিসারদের এই ‘বিদ্রোহ’ নিয়ে চিন্তিত খোদ ডিজিও। এডিজি (হেড কোয়ার্টার) সুনীল কুমারকে সঙ্গে নিয়ে অফিসারদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকেও। এর পরেই মাঠে নেমেছেন নীতীশ। এ ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত কড়া মনোভাব নিয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, দায়িত্ব না নিলে চাকরি ছাড়ো। তবে রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এত কঠোর মনোভাব নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। পুলিশে বিদ্রোহ হলে তার ফল হবে সুদূরপ্রসারী।