Nitish Kumar

Nitish Kumar: মুখ্যমন্ত্রী হলেও প্রধানমন্ত্রিত্বই পাখির চোখ, তাই কি বার বার ডিগবাজি খান নীতীশ?

বিজেপির সঙ্গে জোট বজায় থাকলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী থাকতেন। কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ০৭:৩১
Share:

ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে আজ ইস্তফা দিলেন। কিন্তু গোটা এই পর্বে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে! বিজেপি তো বটেই, ঘরোয়া ভাবে আরজেডি-কংগ্রেস এমনকি বাম দলগুলির নেতারাও বলছেন, যে ভাবে গত কয়েক বছরে নীতীশ ডিগবাজি খেয়েছেন, তাতে আসন্ন লোকসভা বা ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি যে ফের অবস্থান পরিবর্তন করবেন না, এমন নিশ্চয়তা কোথায়!

Advertisement

প্রায় দেড় দশক আগে বিহারে যাদব পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নীতীশ। জেডিইউয়ের ওই নেতাকে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখেছেন আরজেডি নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি। বর্ষীয়ান ওই নেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হলেও, নীতীশের গোড়া থেকেই পাখির চোখ ছিল প্রধানমন্ত্রিত্ব।’’ আর তাই বিজেপির মতো দলের সঙ্গে জোট করেও নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখার প্রশ্নে প্রথম থেকেই বিশেষ ভাবে যত্নবান ছিলেন নীতীশ। সেই কারণে একাধিক বার তাঁর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের মনোমালিন্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সংখ্যালঘুদের পাশ থেকে সরে আসেননি নীতীশ।

রাজনীতির অনেকের মতে, নীতীশের প্রথম এনডিএ-র সঙ্গ ত্যাগও সেই প্রধানমন্ত্রিত্বের দিকে তাকিয়ে। ২০১৩ সালে, তার পরের বছর হতে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় প্রথম বার এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নীতীশ। সেই সময়ে তাঁর লক্ষ্য ছিল, ভোটের পরে অ-কংগ্রেসি দলগুলি ভাল ফল করলে সেই জোটের নেতা হিসেবে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি জানানো। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোদীর বিপুল ভোটে জয় নীতীশের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয়। উল্টে বিহারে ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে কেবল দু’টি আসন পায় নীতীশের দল। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এনডিএ-তে ফিরে যেতে বাধ্য হন নীতীশ।

Advertisement

ফের লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। বিহারে বিজেপির সঙ্গে জোট বজায় থাকলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নীতীশই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকতেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত। তা ছাড়া যে ভাবে নিজের রাজ্যেই কুর্মি ও ওবিসি ভোট নীতীশের পিছন থেকে সরে গিয়েছে তা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আগামী দিনে বিহারে জেডিইউয়ের পক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়া অসম্ভব। উল্টো দিকে রাজ্যে ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি। নীতীশ বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন, আগামী দিনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লক্ষ্যে মূল লড়াইটি হবে বিজেপি ও আরজেডির মধ্যে। বিহারে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জেডিইউ আত্মপ্রকাশ করলে নীতীশের রাজনৈতিক জীবন কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার অবস্থা হবে তাঁর।

আর তা আটকাতেই পরিকল্পিত পদক্ষেপ করেছেন নীতীশ। জেডিইউ নেতৃত্বের মতে, নীতীশের লক্ষ্যই হল, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। সেই কারণে এনডিএ ছেড়ে ইউপিএ-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিনি। আজ আরজেডি-কে নীতীশ যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। নীতীশ চান, শেষের এক বছর মুখ্যমন্ত্রী হোন তেজস্বী যাদব, যাতে তরুণ ওই নেতার নেতৃত্বে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন লড়তে পারে মহাজোট।

নীতীশের এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসাকে কংগ্রেস নেতৃত্ব স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু জেডিইউ নেতার ক্রমাগত পক্ষ বদলের প্রবণতা দেখে আসন্ন নির্বাচনগুলির আগে তাঁরা যে পুরোপুরি নিশ্চিন্তও হতে পারছেন না, ঘরোয়া ভাবে তা বলেই দিলেন কংগ্রেসের এক নেতা। জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়ে বিহার বিজেপির নেতা রাধামোহন সিংহের মন্তব্য, ‘‘স্বার্থের সংঘাত হতে দিন। ফের নীতীশের ডিগবাজি দেখা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement