প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে খোলাখুলি সমর্থন করায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করল বিহার প্রদেশ কংগ্রেস। এমনকী প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়ে দিলেন, ‘হাইকম্যান্ডের নির্দেশ’ পেলে মহাজোট আজই ভেঙে দিয়ে সরকার থেকে বেরিয়ে আসতেও তাঁরা রাজি। ক্ষমতা দখলের এক বছরের মাথায় কংগ্রেসের এমন হুমকিতে বিহারের জোট-সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরী বলেন, ‘‘হাইকম্যান্ড চাইলে আজই ভেঙে যাবে বিহারের মহাজোট সরকার।’’
রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব অবশ্য শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যতক্ষণ না এ নিয়ে কিছু বলছেন ততক্ষণ অশোক চৌধুরীর কথার কোনও গুরুত্ব নেই।’’ মুখে এ কথা বললেও দৃশ্যতই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা মন্ত্রিসভায় তাঁর সহকর্মীর বক্তব্য নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন তেজস্বী।
ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘জেনেশুনে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন অশোক চৌধুরী।’’ তবে নীতীশ কুমার মুখে কিছু না বললেও জেডিইউ গোটা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগী বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে সকলের নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। বিহারে বিজেপির বিরুদ্ধে আমরা সকলে জোটবদ্ধ হয়েছিলাম।’’ তবে জোটের সকলের চিন্তাধারা যে এক খাতেই বইবে, এমন মনে করছেন না ত্যাগী।
এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মিছিল বের করে প্রদেশ কংগ্রেস। সেই মিছিল থেকে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধেও স্লোগান ওঠে বলেও অভিযোগ। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার কথা মানতে চাননি অশোক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জাতীয় দল। মানুষের সমস্যায় আমরা পাশে থাকব। কে আমাদের সঙ্গে থাকল এবং কে গেল তাতে কিছু এসে যায় না।’’ তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্যকে এখনই আপত্তিজনক বলে মনে করছে না জেডিইউ। কে সি ত্যাগী বলেন, ‘‘মহাজোট আগের মতোই অটুট ছিল এবং এখনও অটুটই রয়েছে।’’ বিরোধী বিজেপি শিবির অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এই বক্তব্যে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দলের নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, ‘‘এমন অপমান নীতীশ হজম করবেন কী ভাবে সেটাই দেখার।’’ আপাতত তাঁরাও অপেক্ষায়।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, গত ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরই তা সমর্থন করছিলেন নীতীশ কুমার। এমনকী বেনামি সম্পত্তির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে কংগ্রেস কার্যত মুখ বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু গত কাল উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় লোক দলের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছে জেডিইউ। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ-নেতা অজিত সিংহের প্রভাব রয়েছে। এই এক তরফা জোট নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বের। এমনকী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গেও নীতীশ কুমারের সম্পর্ক সম্প্রতি খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে নীতীশের পছন্দের অরবিন্দ পানাগরিয়া এবং এন কে সিংহকে গত কালই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে নিয়োগ করে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিতে চেয়েছে বিজেপি। যা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে কংগ্রেসের। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য আকস্মিক হতে পারে না। তাঁকে এগিয়ে দিয়ে আসলে জল মাপতে চাইছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডই।