বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ডাহা ফেল করিয়ে মোদী অ্যান্ড কোম্পানি যে বিহারে এতটা ধরাশায়ী হবে সেটা বোধহয় লালু বা নীতীশ কেউই অনুমান করে উঠতে পারেননি। মহাজোটের পকেটে ১৭৯ টি আসন পাকা। এনডিএ-এর কপালে জুটেছে মেরে কেটে ৫৮ টি আসন। পরপর তিন দফায় নির্বাচনে জিতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে নীতীশ কুমারের প্রত্যাবর্তন এখন সময়ের অপেক্ষা। স্বভাবতই বেজায় খুশি নীতীশ। ফলাফল মোটামুটি পরিষ্কার হওয়ার পর পাশে জোট সঙ্গী আরজেডি প্রধানকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনটা সেরে ফেললেন তিনি। বললেন, এই জয় বিহারি গর্বের জয়।
রাজনীতিতে একদা বন্ধু শত্রু হতে বিশেষ সময় নেয় না। উল্টো দিকে চরম শত্রু যে কোন ব্রাহ্ম মুহূর্তে পরম মিত্রে পরিণত হয় সেই সমীকরণও বেশ জটিল. বিহার নির্বাচনও সেই ট্রেডিশনের পুনরাবৃত্তি করল মাত্র।
তবে বিহারে মহা জোটের ল্যান্ড স্লাইড ভিক্ট্রির ম্যান অব দ্য ম্যাচ লালু প্রসাদ যাদব হলেও নীতীশ কিন্তু চুপিসারে আর একটা যুদ্ধও জিতে গেলেন। সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নির্বাচনের বিরোধিতা করে লোকসভা নির্বাচনের আগে বহুদিনের জোটসঙ্গী এনডিএ-এর হাত ছেড়ে ছিলেন তিনি। সেই দফায় বিহারে দলের শোচনীয় হারের সাক্ষী হতে হয়েছিল তাঁকে। দায়ভার স্বীকার করে ছেড়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পদও। সেই পদ যদিও ফিরেছে। তাও বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে জয়টা নীতীশের কাছে ছিল এক কথায় প্রেস্টিজ ফাইট। বিহার জিততে কোমর বেঁধে নেমেছিল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ডুও। পাল্টা চাল চেলে ছিলেন নীতীশও। কাছে টেনে নিয়ে ছিলেন যাকে হটিয়ে একদা বিহারের মসনদ দখল করে ছিলেন, সেই লালু প্রসাদ যাদবকে। আর সেই চালেই কিস্তিমাত। বিহারের নির্বাটনী প্রচারেও কিন্তু বিজিপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুর তাস খেলেছিলেন। ফলের ইঙ্গিত, কাজ হয়েছে তাতেও।রবীবাসরীয় সন্ধে বলছে সব হিসেব ওলট পালট করে বিহারে মুখ থুবরে পড়েছে বিজেপি। হাওয়া হয়ে গেছে মোদী ঝড়।
লালুর সঙ্গে সংঘাত না হলে সিংহাসনটা আপাতত আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিশ্চিত। লোকসভা ভোটের ক্ষতে এখন নরম প্রলেপ।ব্যালট বাক্সের যে মধুর প্রতিশোধ নীতিশ কুমার মোদীকে ফিরিয়ে দিলেন সেই আঘাত প্রধানমন্ত্রীর কত রাতের ঘুম কারবে সেটা বোধহয়, কারোরই জানা নেই। মোদী-নীতীশ দ্বৈরথে সেকেন্ড ল্যাপে টেক্কা দিলেন দ্বিতীয় জন। মুচকি হাসি এখন নীতীশের ঠোঁটের, আজ রাতটা তাঁর সুখ স্বপ্নের।