জল্পনার বিষয়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হতে চলেছেন! নীতীশ নিজে এ কথা শুনে ভাব দেখিয়েছেন, কথাটা শুনে তিনি নিজেই চমকে গেলেন। তাতে অবশ্য জল্পনা থামেনি।
ফাইল চিত্র।
তিন দিন আগে প্রশান্ত কিশোর পটনায় গিয়ে নীতীশ কুমারের সঙ্গে নৈশভোজ করার পরেই কৌতূহল ছড়িয়েছিল, রাজনীতির হাঁড়িতে নতুন কী খিচুড়ি রান্না হতে চলেছে!
উত্তরপ্রদেশের ভোটের চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগে আজ রাজধানীতে সেই নীতীশ কুমারকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠল। জল্পনার বিষয়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হতে চলেছেন! নীতীশ নিজে এ কথা শুনে ভাব দেখিয়েছেন, কথাটা শুনে তিনি নিজেই চমকে গেলেন। তাতে অবশ্য জল্পনা থামেনি।
এক সপ্তাহ আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী জুলাই মাসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের কৌশল নিয়ে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এর পরেই রাও মাঠে নামেন। মুম্বইয়ে গিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের সঙ্গে কথা বলেন।
এনসিপি নেতা নবাব মালিক মন্তব্য করেছেন, নীতীশ যদি বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেন, তা হলে এ নিয়ে বিচার-বিবেচনা হতে পারে। রাজধানীতে জল্পনা ছড়িয়েছে, নীতীশ উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পরে বিহারে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এই জেডিইউ নেতাই বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হবেন। আর শিবসেনা সূত্র বলছে, এনডিএ-র শরিক দলের নেতা নীতীশ কেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হবেন? নীতীশ হলে বিজেপি তথা এনডিএ-র প্রার্থী হতে পারেন।
শিবসেনা সূত্রের এই বক্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বিজেপির তরফ থেকেই এনডিএ জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে নীতীশ কুমারের নাম ভাবা হচ্ছে? সত্তর বছরের নীতীশ ২০২০-তে পঞ্চম বারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেছেন। তবে বিহারের জোটে তাঁর দল জেডিইউ-এর থেকে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা বেশি। বিজেপি মনে করে, নীতীশের জন্যই বিহারে বিজেপির বৃদ্ধি আটকে রয়েছে। নীতীশ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে গেলে বিজেপি বিহারের জোট সরকারেও আরও কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারবে।
কিন্তু নীতীশ কেন তাতে রাজি হবেন? নীতীশকে আজ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার মাথায় তো এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। এমন কল্পনাও করিনি। এমন কিছু বিচার-বিবেচনার মধ্যেও নেই।’’ বিহারের রাজনীতিকেরা অবশ্য মনে করছেন, এক সময় প্রধানমন্ত্রী পদের স্বপ্ন দেখা নীতীশ এখন বুঝে গিয়েছেন, তাঁর পক্ষে নরেন্দ্র মোদী-উত্তর জমানাতেও এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব নয়। বিজেপি বিরোধী জোটও তাঁকে মেনে নেবে না। সে ক্ষেত্রে নাকের বদলে নরুনের মতো তিনি প্রধানমন্ত্রীর বদলে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য রাজি হতেই পারেন।
সে ক্ষেত্রে বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী কে হবেন? শিবসেনা সূত্রের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, শরদ পওয়ার রয়েছেন। পুত্রকে মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছেড়ে দিয়ে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও নিজেই বিরোধী শিবিরের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে পারেন। শিবসেনার তরফে দাবি, রবিবার রাওয়ের সঙ্গে উদ্ধবের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর কী ভূমিকা পালন করছেন, তা নিয়ে রাজধানীতে কৌতূহল তুঙ্গে। কারণ কিশোর এক সময় নীতীশের দলেই ছিলেন। তাঁকে জেডিইউ থেকে বার করে দেওয়া হয়। এখন আবার তিনি নীতীশের সঙ্গে নৈশভোজ করছেন। আবার মাসখানেক আগে তিনি রাওয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। ২০২৩-এ তেলঙ্গানার বিধানসভা ভোটে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির হয়ে কাজ করতে পারে।
বিজেপি-সহ সব রাজনৈতিক দলই মানছে, সব কিছুই নির্ভর করছে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের উপরে। বিজেপি যদি বিপুল আসনে উত্তরপ্রদেশে জেতে, তা হলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অঙ্কের হিসেবেও বিজেপি এগিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের যাবতীয় সক্রিয়তা এমনিতেই মিইয়ে যাবে। না হলে নীতীশ-চন্দ্রশেখর বা পওয়ারকে নিয়ে অঙ্ক কষা শুরু হবে।