নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
পাটিগণিতের অঙ্কে এগিয়েই ছিলেন নীতীশ। আস্থাভোটে তাঁর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের পক্ষেই ভোট দিলেন বিহারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক। নীতীশের পক্ষে ১২৯টি ভোট পড়েছে। ভোটাভুটির আগেই অবশ্য বিরোধী আরজেডি, কংগ্রেস এবং বাম বিধায়কেরা স্লোগান দিতে দিতে বিধানসভা কক্ষ ত্যাগ করেন।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ কে ঐক্যবদ্ধ করতে চাইলেও তিনি সফল হননি। বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে এমনই দাবি করলেন নীতীশ কুমার।
লালুপ্রসাদ যাদব এবং রাবড়ী দেবীর ১৫ বছরের শাসনে বিহারে সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে বলে দাবি করে আরজেডিকে তোপ দাগলেন নীতীশ কুমার।
বিরোধী আরজেডি এবং কংগ্রেসকে তোপ দাগলেন আরজেডি এবং জেডিইউ নেতারা। নীতীশের দলের নেতা কেসি ত্যাগী বলেন, “কংগ্রেস তাদের বিধায়কদের হায়দরাবাদে পাঠিয়ে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছিল। আর আরজেডি বিধায়কদের জেলবন্দি বানিয়েছিল।” প্রসঙ্গত, আরজেডি বিধায়কেরা অস্থায়ী শিবির করে গত কয়েক দিন ধরেই তেজস্বীর সরকারি বাসভবনে ছিলেন। বিরোধী জোটের সমালোচনায় সরব হন বিহারের দুই উপমুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির বিজয় সিন্হা এবং সম্রাট চৌধরী। তাঁরা জানান, এনডিএ শাসনে বিহারকে তারা সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিমুক্ত করবেন।
ভারতরত্ন নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে তেজস্বী বলেন, “আমি খুশি যে কর্পূরী ঠাকুর (ভারতরত্ন) পেয়েছেন।” তার পরই বিজেপিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “তারা ভারতরত্নকে একটি চুক্তি বানিয়ে ফেলেছে। চুক্তিটি হল যদি আমার সঙ্গে থাকো, তবে তোমায় ভারতরত্ন দেব।”
সোমবার বিহার বিধানসভায় অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই দেখা যায় আরজেডির তিন বিধায়ক চেতন আনন্দ, নীলম দেবী এবং প্রহ্লাদ জোশী বিরোধী বেঞ্চে না বসে শাসক বিধায়কদের সঙ্গে বসে রয়েছেন। পরে স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে দেখা যায়, তিনটি অতিরিক্ত ভোট পেয়েছে এনডিএ শিবির। মনে করা হচ্ছে ওই তিন জন অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। আস্থাভোটেও তাঁরা নীতীশের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। অন্য রাজ্যের একমাত্র মিম বিধায়ক জানিয়েছেন, তিনি কোনও ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’কে ভোট দেবেন না। সূত্রের খবর, ভোটাভুটিতে তিনি নীতীশের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।
বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে নীতীশের প্রতি আক্রমণ শানালেন তাঁরই প্রাক্তন ডেপুটি তেজস্বী যাদব। নীতীশের উদ্দেশে লালু-পুত্র বলেন, “বিহারের মানুষ জানতে চায়, আপনি কেন বার বার অবস্থান বদল করেন?” এর পাশাপাশি খানিক বিদ্রুপের সুরেই আরজেডি নেতা বলেন, “ন’বার শপথ (মুখ্যমন্ত্রী পদে) নিয়ে ইতিহাস গড়ার জন্য আমি নীতীশ কুমারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরেই পদত্যাগ করেছিলেন বিধানসভার স্পিকার। তবে বিরোধীদের দাবিতে ভোটাভুটি হয়। তাতে দেখা যায় ১২৫টি ভোট পড়েছে প্রস্তাবের পক্ষে। আর ১১২টি পড়েছে প্রস্তাবের বিপক্ষে।
সোমবার বিধানসভায় রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকর ভাষণ দেওয়ার পরেই স্পিকার তথা আরজেডি বিধায়ক আওয়াধ বিহারি চৌধরির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। তবে ভোটাভুটির আগেই পদত্যাগ করেন স্পিকার।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ১২২টি আসন। নীতীশের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই রয়েছেন ১২৮ জন বিধায়ক। নীতীশকে স্বস্তি দিয়ে এনডিএ-র শরিক দল জিতনরাম মাঝির হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (হাম) জানিয়েছে, তাদের চার জন বিধায়কই সোমবার নীতীশের পক্ষে ভোট দেবেন। মাঝে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল যে, শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করতে পারেন জিতনরাম। তবে রবিবার সেই জল্পনা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে হামের তরফে। অন্য দিকে, বিরোধী শিবিরের হাতে রয়েছে ১১৪টি ভোট। আরজেডি, কংগ্রেস ছাড়াও বিরোধী শিবিরে রয়েছে তিন বাম দল সিপিআই, সিপিএম এবং সিপিআই(এমএল)। রাজ্যের একটি বিধায়ক রয়েছে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল মিমের। তাঁর অবস্থান এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। মনে করা হচ্ছে যে, তিনি ভোটদানে বিরত থাকবেন। তবে সোমবার নীতীশের শিবির থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে বিরোধীরা চমক দেখায় কি না, কিংবা বিহার বিধানসভায় কোনও নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, সে দিকে নজর থাকবে।