নীতীশ কুমার। — ফাইল চিত্র।
নিজেই নিজেকে বলেছিলেন ‘চোরের সর্দার’। কারণ, তাঁর কৃষি দফতরের সব অফিসারই ‘চোর’ বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। জনসভায় জনতাকে বলেছিলেন, তাঁর দফতরের অফিসারেরা ঘুষ চাইলে তাঁদের জুতোপেটা করতে। যাঁর সরকারে তিনি মন্ত্রী, সেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের শাসনকালের দিকে আঙুল তুলে বলেছিলেন, ১৭ বছর ধরে কোটি কোটি টাকা খরচে তিনটি রোডম্যাপ তৈরি হলেও গত অর্থবর্ষে বিহারে মোট উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ২০১১-১২-র চেয়ে কম।
নিয়মিত নীতীশ এবং তাঁর ডেপুটি তেজস্বী যাদবের অস্বস্তি বাড়াচ্ছিলেন বিহারের কৃষিমন্ত্রী সুধাকর সিংহ। গত কাল নিঃশব্দেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। আরজেডি-র রাজ্য সভাপতি জগদানন্দ সিংহের ৪৬ বছরের পুত্র সুধাকর প্রথম বার বিধায়ক হয়েই যখন কৃষির মতো দফতরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তখন তার নেপথ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীর হাতই দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু সূত্রের খবর, দলীয় সতীর্থ সুধাকরকে ক্রমাগত বোঝাতে বোঝাতে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়ে তাঁকে ছেঁটে ফেলারই সিদ্ধান্ত নেন লালু-পুত্র। সুধাকরের ইস্তফাপত্র রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য গিয়েছে। জগদানন্দই আজ ছেলের ইস্তফার খবর ঘোষণা করেন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সুধাকর স্পষ্টবক্তা হিসেবেই পরিচিত। গত কালই তিনি বলেছিলেন, বিহারে এপিএমসি আইন এবং মান্ডি ব্যবস্থা না ফেরানো পর্যন্ত তাঁর শান্তি নেই। নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের মধ্যে একটি এই মান্ডি ব্যবস্থাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেবে বলে বিরোধীদের আশঙ্কা ছিল। অথচ বিহারে ২০০৬ সালেই এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়। সুধাকর সেই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘কৃষকদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাউকে রুখে দাঁড়াতেই হবে।’’ নিজের দফতরে বিজেপির কর্মসূচি চলতে দেবেন না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তবে সুধাকর সবচেয়ে বড় শোরগোল ফেলেছিলেন দফতরের ‘চুরি’ নিয়ে মন্তব্যে। রীতিমতো বোমা ফাটিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দফতরে এমন একটা বিভাগ নেই, যেখানে চুরি হয় না। দফতরের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আমি তাদের সর্দার। আমার উপরেও অন্য অনেক সর্দার আছেন। সরকার পাল্টালেও কাজের ধরন পাল্টায়নি।’’ কৃষিমন্ত্রীর ইস্তফাকে ‘রাজনৈতিক কমেডি’ বলেছে বিজেপি। বিহারে তাদের নেতা সুশীল মোদীর মন্তব্য, ‘‘মহাজোট সরকার হওয়ার পরে আরজেডি-র দু’জন মন্ত্রী ইস্তফা দিলেন। নীতীশকে আরও অসম্মান সইতে হবে।’’ সংবাদ সংস্থা