এই শেষ। আর কখনও দল বদলাবেন না। রবিবার নবম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর জানিয়ে দিলেন নীতীশ কুমার। ২০০৫ সালে বিজেপির হাত ধরেই প্রথম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। চতুর্থ বার সেই দলের হাত ধরলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর রাজভবনের সামনে সাংবাদিকদের এও জানালেন, যেখানে ছিলেন, সেখানেই আবার ফিরেছেন।
রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তিনি জানিয়েছেন, জোটে থেকে কাজ করতে পারছিলেন না। সহকর্মীদের পরামর্শে তাই ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার বিজেপির হাত ধরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তার পর প্রথম বার মুখ খুলেই তিনি বলেন, ‘‘যেখানে ছিলাম, আবার সেখানে ফিরলাম। আর কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই নেই।’’ এর আগে যত বার জোট বদলেছেন, প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন নীতীশ। বার বার অভিযোগ করেছেন, ‘নীতি’-র সঙ্গে মিল হয়নি বলেই ছেড়েছেন।
রবিবার ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর নীতীশ বলেন, ‘‘নতুন জোটে যাওয়ার জন্য আগের জোট ছেড়েছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক ছিল না। তাই ইস্তফা দিয়েছি। এই জোটের সঙ্গে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছি। সহকর্মীদের বলেছিলাম। ওরাই জোট ছেড়ে আসার পরামর্শ দেয়।’’
২০২২ সালের আগস্টে বিজেপির হাত ছেড়ে ‘মহাগঠবন্ধন’-এর হাত ধরেছিলেন নীতীশ। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওদের (বিজেপি) সঙ্গে জোটে যাওয়ার থেকে মরে যাওয়া ভাল।’’ তিনি তখন এও দাবি করেছিলেন যে, বিজেপির সঙ্গে জোটে যাওয়া ছিল ‘ভুল’। তিনি আরও বলেন, ‘‘শুনুন, ওরা কম চেষ্টা করেনি। আমাকে দলে টানতে ওরা তেজস্বী এবং ওঁর বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এখন আবার ওদের হেনস্থার চেষ্টা করছে। ওরা এ সব করেই চলে।’’
২০১৫ সালে ‘মহাগঠবন্ধন’-এর হাত ধরে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন নীতীশ। ২০১৭ সালে সেই জোট ছেড়ে আবার বিজেপির দিকে ঝোঁকেন নীতীশ। লালু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল সিবিআই। তখন নীতীশ বলেছিলেন, ‘‘এখন পদক্ষেপ না করলে সেটা ঠিক হবে না। আমি এই ধরনের রাজনীতি করি না। দমবন্ধ হয়ে আসছিল। আমার অন্তরাত্মা নাড়া দিচ্ছিল। আর কোনও উপায় ছিল না।’’ আরজেডির বিরুদ্ধে তিনি এও অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁর দলের বিধায়কদের প্রলোভন দেখিয়ে দলত্যাগ করাতে চাইছে।
২০১৩ সালে মোদী বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পর ১৭ বছরের সম্পর্ক ভেঙেছিলেন নীতীশ। এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার এনডিএ ছাড়ার জন্য দায়ী বিজেপির ব্যর্থতা। তোমরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছ যে, পুরনো শরিকদলগুলি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কোনও জোট হয় না। কোনও দল সরকার গড়তে চাইলে তাদের যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকে, তবে সেই দলকেই অন্য দলের সমর্থন আদায় করতে হয়। আর এখানে পুরনো জোটশরিকদেরই ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।’’ প্রায় ১১ বছর পর আবার সেই দলেরই হাত ধরলেন নীতীশ। জানালেন, আর জোটবদল নয়।