সৌহার্দ্য: বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব। সোমবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জাতভিত্তিক জনগণনা নিয়ে বৈঠকের পরে। ছবি: পিটিআই
দেশ জুড়ে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি জানিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন সে রাজ্যের ১০টি দলের একটি প্রতিনিধি দল। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জাতভিত্তিক জনগণনার ওই দাবি বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে সূত্রের মতে, উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আর ছ’মাসও বাকি নেই। তাই আপাতত এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না মোদী। কারণ, জাতভিত্তিক জনগণনার পরেই যে সংরক্ষণের ৫০ শতাংশ সীমা বাতিলের দাবি উঠবে, তা বিলক্ষণ জানেন বিজেপি নেতারা। আর সেই সীমা উঠে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন উচ্চবর্ণের মানুষেরা— যাঁরা মূলত বিজেপির ভোটার। উত্তরপ্রদেশে যোগী শাসনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব ব্রাহ্মণেরা। তাঁদের মানভঞ্জনে যোগী মন্ত্রিসভায় দুই ব্রাহ্মণ নেতাকে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এই পরিস্থিতিতে জাতভিত্তিক জনগণনার সিদ্ধান্ত নিলে উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপি থেকে একেবারে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি উঠলেও উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে দলেরই একটি অংশ।
সদ্য সমাপ্ত সাংসদ অধিবেশনেও জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি উঠেছিল। একই সঙ্গে দাবি ওঠে, সংরক্ষণের যে ৫০ শতাংশ সীমা রয়েছে তা বাতিল করার। সংসদে ওই দাবি ওঠার পরে আজ নীতীশের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। নীতীশের দাবি, জাতভিত্তিক জনগণনা হলে কোন শ্রেণিতে কত মানুষ রয়েছেন তা জানা সম্ভব। সেই ভাবে সরকারি পরিকল্পনা রচনা করতে পারবে সরকার। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের সঙ্গে আজ এই দাবি জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবও।
অনেকের মতে, ওই পদক্ষেপ করা হয়েছে ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে। বিহারে প্রায় ২৫ শতাংশ ওবিসি রয়েছেন, যে ভোটকে টানতে তৎপর নীতীশ। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশে ওবিসি ভোটার রয়েছেন প্রায় ৪০ শতাংশ, অতীতে যাঁরা মোদী ও যোগী আদিত্যনাথের নামে ঢেলে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে ওবিসি সমাজের বড় অংশ বিজেপির ওপর ক্ষুব্ধ। ওই ভোটকে নিশানা করেছেন অখিলেশ ও মায়াবতী। তাই ওবিসি-র মন জয়ে তড়িঘড়ি বাদল অধিবেশনে ওবিসি রিজ়ার্ভেশন বিল পাশ করায় সরকার। একই সঙ্গে নীতীশের ওই দাবিকে সমর্থন করে সরব বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতারা। বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা বিজেপি নেতারা ওই জাত গণনার পক্ষে সরব। তবে কংগ্রেসের দাবি, জাতভিত্তিক জনগণনা হলে বেরিয়ে পড়তে পারে যে, ইতিমধ্যেই সংরক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারিত সীমা ৪৯ শতাংশকে অতিক্রম করে গিয়েছে। সেই কারণেই সরকার উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে বিষয়টিকে আর খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে না।