রাজভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব (বাঁ দিকে)। বুধবার পটনায়। ছবি: পিটিআই
গত কাল তিনি ছিলেন এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রী। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ‘মহাজোট’-এর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আজ শপথ নিলেন নীতীশ কুমার। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অষ্টম বার।
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ ছাড়াও উপমুখ্যমন্ত্রী পদে আজ শপথ নেন আরজেডি নেতা তথা লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব। সূত্রের মতে, স্বাধীনতা দিবস সংক্রান্ত অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পরে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভার পূর্ণ সম্প্রসারণ করা হবে। ‘নী-জস্বী’ জোট নিয়ে গোড়া থেকেই আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৭ সালে তেজস্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আরজেডির সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। ওই মামলায় জামিনে মুক্ত তেজস্বী দোষী প্রমাণিত হলে মুখ্যমন্ত্রী কী করবেন, আজ সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপিতে নীতীশের একমাত্র ‘বন্ধু’ সুশীল মোদী।
বিজেপি বিহারে জেডিইউয়ের অন্দরে বিদ্রোহে উস্কানি দিয়ে দল ভাঙতে চাইছে বলে অভিযোগ তুলে গত কাল এনডিএ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন নীতীশ। বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করায় ফের নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী করে মহাজোট সরকার গড়তে এগিয়ে আসে আরজেডি, কংগ্রেস, বামেদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি। বিজেপির মতে, এনডিএ-তে থাকলে নিজের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করেই লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের সঙ্গে হাত মেলানোর কৌশল নিয়েছেন নীতীশ। কারণ, তাঁর আসল লক্ষ্য বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া। যদিও আজ শপথের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে নীতীশ জানান, তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। তিনি ওই পদের দাবিদারও নন। কিন্তু এর পরেই তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আসল প্রশ্ন হল, যিনি ২০১৪ সালে জিতে এসেছিলেন, তিনি ২০২৪ সালেও জিতবেন কি?’’
বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে নীতীশের উঠে আসা কংগ্রেসের কাছেও আদৌ কাম্য নয়, বরং যথেষ্ট অস্বস্তির। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, বিরোধী জোট হলেই যে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে নীতীশ তার মুখ হয়ে উঠবেন, এখনই এতখানি এগিয়ে ভাবছেন না তাঁরা। এমনকি নীতীশকে ইউপিএ-র আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়েও এখনও কোনও কথাবার্তা হয়নি বলে কংগ্রেস সূত্রের দাবি। কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতার মতে, বিহারে সরকারের শরিক হওয়ার সুযোগ নিয়ে দলের উচিত নিজের সংগঠন মজবুত করা। বিজেপির বিরোধিতা করতে গিয়ে আঞ্চলিক দলকে জমি ছেড়ে দেওয়া কাজের কথা নয়।
তবে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ফোনে কথাবার্তায় নীতীশ বলেছেন, দেশের ভবিষ্যতের জন্য মজবুত কংগ্রেস প্রয়োজন। নতুন সরকারে কংগ্রেস যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তাতে অনেকটাই আশ্বস্ত এআইসিসি। শোনা যাচ্ছে, ১৫ অগস্টের পরে দিল্লি এসে সনিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন নীতীশ। সেখানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। চলতি বছরের শেষে গুজরাতের বিধানসভা ভোটে নীতীশকে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রচারের প্রস্তাব দেওয়া হবে বলেও সূত্রের খবর। ২০১৭-র গুজরাত বিধানসভা ভোটে জেডিইউ প্রার্থী দিলেও নীতীশ প্রচারে যাননি।
নীতীশের মন্ত্রিসভায় রাজস্ব, আবগারি, সড়ক ও পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ চারটি দফতর চেয়েছে কংগ্রেস। মন্ত্রিসভায় জাতপাতের সমীকরণ মেনে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে নীতীশকে। আর এক শরিক আরজেডি উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীর জন্য স্বরাষ্ট্র দফতর চেয়ে দরবার করেছে। তবে স্পিকারের পদটিও চেয়ে রেখেছে আরজেডি, যা নীতীশের কাছে যথেষ্ট দুশ্চিন্তার। এনডিএ সরকারে স্পিকারের পদ বিজেপিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন নীতীশ। দলের অভিযোগ, সে যাত্রায় কুড়ি মাসে নীতীশকে বিধানসভায় একাধিক বার বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন বিজেপির স্পিকার। ফলে আরজেডির দাবি কতটা নীতীশ মানতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে জেডিইউতেই।
আজ নীতীশ-তেজস্বী শপথ নেওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে বিজেপি আক্রমণে নামায় প্রায় পনেরো বছর নীতীশের উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো সুশীল মোদীকে। বিজেপিতে নীতীশের একমাত্র ‘বন্ধু’ বলে পরিচিত সুশীল তাঁর দলের বেঁধে দেওয়া লাইন মোতাবেক বলেন,‘‘জোট ভেঙে নীতীশজি রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে তো বটেই, বিহারবাসীর সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’’ ২০১৭ সালে নীতীশের মহাজোট ছাড়ার প্রসঙ্গ উস্কে সুশীল আরও বলেন, ‘‘জেডিইউ প্রধান বলেছিলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে আপস করব না।’ অথচ, আইআরসিটিসি দুর্নীতি মামলায় তেজস্বীর নামে সিবিআই চার্জশিট জমা দিয়েছে। আপনি এক জন চার্জশিটপ্রাপ্তকে উপমুখ্যমন্ত্রী করছেন। আপাতত জামিনে রয়েছেন তেজস্বী। তাঁর বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণও রয়েছে। যে কোনও দিন গ্রেফতারও হতে পারেন তিনি। তখন নীতীশ কুমার কী করবেন?’’ এর কোনও জবাব অবশ্য ছিল না ‘নতুন’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।