অভ্যর্থনা: আমদাবাদ বিমানবন্দরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে স্বাগত জানাচ্ছেন গুজরাতের নবনিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। ছবি পিটিআই।
বিজয় রূপাণীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর পরে গুজরাতে বিজেপি সরকারের মন্ত্রিসভা থেকেও আরও বেশ কয়েক জন প্রবীণ নেতা বাদ পড়তে পারেন। ২০২২-এর ডিসেম্বরে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের কাজে গতি আনতে বেশ কিছু নতুন মুখ নিয়ে আসা হতে পারে।
সোমবার গুজরাতের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভূপেন্দ্র পটেল শপথ নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শপথগ্রহণে যোগ দিতে সকালেই আমদাবাদে পৌঁছে যান। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে ভূপেন্দ্র পটেল একেবারে ঝুঁকে পড়েন। তার পর স্বামীনারায়ণ মন্দিরে পুজো দিয়ে, গো-সেবা করে গুজরাতের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। কিন্তু তাঁর মন্ত্রিসভায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিতিন পটেল থাকবেন কি না, তা এ দিন স্পষ্ট হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিজয় রূপাণী ইস্তফা দেওয়ার পরে উপ-মুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেলই মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে সব থেকে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রথম বারের বিধায়ক ভূপেন্দ্র পটেলকে বেছে নেওয়ায় রবিবার নিজের হতাশা চেপে রাখেননি তিনি। আজ আমদাবাদে শপথের আগে ভূপেন্দ্র নিজেই নিতিনের সঙ্গে দেখা করতে যান। বৈঠকের পরে নিতিন বলেন, ‘‘কোনও পদ পেলাম কি না, সেটা আমার কাছে বড় বিষয় নয়। দল আমাকে অনেক বড় পদ দিয়েছে। দলের জন্য, গুজরাতের জন্য যা প্রয়োজন, আমি করব।’’ মুখে এ কথা বললেও তাঁর চোখ ছিল জলে ভেজা।
মুখ্যমন্ত্রীর পদ না মেলার পরে নিতিন আর উপ-মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভূপেন্দ্রর সরকারে কে কে মন্ত্রী হবেন, তা-ও এখনও ঠিক হয়নি। সূত্রের খবর, অমিত শাহ নিজেই ভূপেন্দ্র পটেল ও অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিসভার তালিকা চূড়ান্ত করবেন। বেশ কিছু প্রবীণ নেতাকে বাদ দেওয়া হতে পারে। সৌরাষ্ট্র ও উত্তর গুজরাতের বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হতে পারে। কারণ, এই সব অঞ্চলে বিজেপি আসন বাড়ানোর চেষ্টা করবে। আগামিকাল, মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির সংসদীয় বোর্ডে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। সব চূড়ান্ত হলে নতুন মন্ত্রীরা শপথ নেবেন।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে পাটীদার ভোট সমস্যায় ফেলেছিল। সাম্প্রতিক পুর নির্বাচনে গুজরাতের বস্ত্র শিল্পের মক্কা সুরাতে আম আদমি পার্টির জয় দলের নেতৃত্বকে চিন্তায় ফেলেছে। কারণ, সুরাতে ব্যবসায়ীরা চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেন। সেখানে আম আদমি পার্টি প্রভাব ছড়িয়েছে। পাটীদারদেরও জায়গা দিয়েছে। কিছু দিন আগে বিজেপির আমরেলি জেলা সভাপতি আপ-এ যোগ দিয়েছেন। তিনিও পাটীদার নেতা। পাটীদারদের পাশে টানার সঙ্গে সঙ্গে আপ হিন্দুত্বের রাজনীতিও করছে বলে বিজেপি নেতারা বুঝতে পারেন। সুরাতে একটি মন্দির ভাঙার পরে আপ নেতারা প্রচার করেছিলেন, তাঁরা থাকতে হিন্দুদের আর ভয় নেই। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘সাধারণত গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী ও দলের রাজ্য সভাপতির মধ্যে একজন পাটীদার হন। বিজয় রূপাণী ও রাজ্য সভাপতি সি আর পাটিলের কেউই পাটীদার ছিলেন না। ভূপেন্দ্র পটেল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় সেই ভারসাম্য ফিরে এল।’’
উপ-মুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেলও পাটীদার সম্প্রদায়ের নেতা। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, নিতিন পাটীদার সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেও পাটীদার সমাজের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কম। সেই তুলনায় ভূপেন্দ্র পাটীদারদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জড়িত সর্দারধাম বিশ্ব পাটীদার কেন্দ্রের অছি পরিষদের সদস্য। পাঁচ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী হতে না পেরে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ ও পছন্দমতো দফতরের জন্য দর কষাকষি করাও নিতিনের বিরুদ্ধে গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আজ ভূপেন্দ্র সৌরাষ্ট্রের বন্যা নিয়ে বৈঠকে বসেছেন। কিন্তু নতুন মুখ্যমন্ত্রী আগামী ১৫ মাসে ভোটের আগে কতটা জাদু দেখাতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দিল্লি থেকেই গুজরাত সরকার চালানো হবে বলে বিজেপি নেতাদের মত। কংগ্রেসের নেতাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বদল করে বিজেপি কার্যত মেনে নিল যে, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে।