আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আশাদেবী। শুক্রবার ছবি: পিটিআই।
কাল ফাঁসি হচ্ছে না নির্ভয়ার ধর্ষক ও খুনিদের। আজ দিল্লির পাটিয়ালা কোর্টের বিচারক ধর্মেন্দ্র রানা রায় দিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না জারি করা পর্যন্ত ফাঁসি স্থগিত থাকবে।
কাল দিল্লির এই দায়রা আদালতে দণ্ডিতদের আইনজীবী আপিল করেন, ১ ফেব্রুয়ারি চার জনের ফাঁসির উপরে স্থগিতাদেশ জারি করা হোক। তাঁর যুক্তি ছিল, অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত বিনয় শর্মা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনে করেছে। রাষ্ট্রপতি এখনও তাঁর সিদ্ধান্ত জানাননি। আরও দুই সাজাপ্রাপ্ত, অক্ষয়কুমার সিংহ এবং পবন গুপ্তের সামনে ফাঁসির আদেশ চ্যালেঞ্জ করার আইনি পথ এখনও খোলা রয়েছে। চার দণ্ডিতের মধ্যে একমাত্র মুকেশ সিংহের সামনেই আর কোনও আইনি পথ খোলা নেই। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এক অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের মৃত্যুদণ্ড একই দিনে কার্যকর করতে হবে। তাই কাল শুধু মুকেশের ফাঁসি হওয়া সম্ভব নয়। পিছিয়ে দেওয়া হোক চার জনেরই ফাঁসি। আইনজীবীর সেই আর্জি শুনে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করেন বিচারক রানা। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে ফাঁসি স্থগিত করার রায় দেন তিনি।
রায় শুনে ভেঙে পড়েন নির্ভয়ার মা-বাবা আশা ও বদ্রীনাথ সিংহ। তাঁদের দাবি, দণ্ডিতদের আইনজীবীর চালেই এ ভাবে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে ফাঁসি। এবং কেন্দ্রীয় বা দিল্লি সরকার কিছুই করছে না। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল অবশ্য টুইট করেছেন, ‘‘খুবই দুঃখের যে, আইনের ফাঁক খুঁজে সাজাপ্রাপ্তরা এ ভাবে ফাঁসি এড়িয়ে যাচ্ছে।’’ দায়রা আদালতের আজকের রায় নিয়ে আশাদেবীদের আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই আদালতই দু’বার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিল। বিচারক সতীশ অরোরা সেই রায় দিয়েছিলেন। আজ কী করে সেই পরোয়ানা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হল!’’
এ দিনই অবশ্য অন্যতম দণ্ডিত পবন গুপ্তের আর্জি না শুনেই খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনার সময়ে সে নাবালক ছিল বলে আগে একাধিকবার আপিল করেছে পবন। প্রতি বারই তার দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে। এর আগে পবনকে নাবালক প্রমাণ করতে আদালতে ভুয়ো নথি জমা দেওয়ায় তার
আইনজীবীকে কড়া তিরস্কার করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর ভানুমতী এই নিয়ে আর শুনানিতেই সম্মত হননি। এ ভাবে একই বিষয় নিয়ে বার বার আবেদন করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফাঁসি দেওয়ার প্রশ্নে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে গত ২২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শীর্ষ আদালতকে কেন্দ্র আর্জি জানিয়েছিল, যাতে মৃত্যু পরোয়ানা কার্যকর ব্যাপারে নির্দেশিকায় কিছু পরিবর্তন করা হয়। মৃত্যু পরোয়ানা জারির পরেও যে ভাবে নির্ভয়ার দণ্ডিতদের আইনজীবী বার বার ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়ার ফন্দি-ফিকির খুঁজেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই নির্দেশিকায় পরিবর্তনের আর্জি জানায় কেন্দ্র। আজ
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের নেতৃত্বাধীন এক বেঞ্চ কেন্দ্রের সেই আর্জি খতিয়ে দেখতে সম্মত হয়েছে।
এ দিনই অবশ্য তিহাড়ে এসে পৌঁছেছেন মেরঠের পবনকুমার জল্লাদ। জেল সূত্রের খবর, দণ্ডিতদের সম-ওজনের মাটি ও পাথর ভর্তি বস্তা দিয়ে ফাঁসির মহড়াও দিয়েছেন তিনি।