ফাইল চিত্র।
নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত চার জনের ফাঁসি কার্যকর করার জন্য নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হল। আগামী ৩ মার্চ সকাল ৬ টায় তাদের প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্ট। তবে আগেও দু’বার ফাঁসির আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজ এই রায়ের পরে নির্ভয়ার মা আশা দেবীর মন্তব্য, ‘‘আশা করছি, ফাঁসির জন্য এটাই চূড়ান্ত দিন।’’
ধর্ষক ও খুনিদের ফাঁসির দিন স্থির করার জন্য আদালতে গিয়েছিল নির্ভয়ার পরিবার ও দিল্লি সরকার। সেখানে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ জানান, দোষী সাব্যস্ত চার জনের মধ্যে তিন জন— বিনয় শর্মা, মুকেশ সিংহ ও অক্ষয় সিংহের সামনে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। আর এক দোষী পবন গুপ্তের কোনও আবেদন কোনও আদালতের সামনে নেই। এর পরেই অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ধর্মেন্দ্র রাণা দোষী সাব্যস্ত চার জনের নামে আজ নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন।
তবে ফাঁসির এই দিনটি নিয়েও অনিশ্চয়তা শেষ হয়নি। কারণ, দোষী সাব্যস্ত পবনের সামনে এখনও শীর্ষ আদালতে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রপতির সামনে প্রাণভিক্ষার আর্জিও জানাতে পারে সে। এই দুই প্রক্রিয়ার পরেও তার ফাঁসির সাজা বহাল থাকলে প্রাণদণ্ডের জন্য আরও ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। পবনের আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল এই দুই রাস্তাই ব্যবহার করতে চাইছে। অক্ষয় কুমারের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলও রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে চলেছে।
আদালত পর পর দু’বার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলেও আইনের ফাঁক খুঁজে নিয়ে আইনি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করে চলেছে দোষীরা। একই অপরাধে যে হেতু চার জনের একসঙ্গেই ফাঁসি হওয়ার কথা, তাই দোষীরা এত দিন এক এক করে তাদের হাতে থাকা আইনি অস্ত্রগুলি ব্যবহার করেছে। ফলে দু’বার পিছিয়ে গিয়েছে ফাঁসি। তবে এই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য দিল্লি হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দোষীদের যাবতীয় আবেদন এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে। এখন সেই সময়সীমাও অতিক্রান্ত। ফলে আইনি অস্ত্র ব্যবহার করতে হলে আগে সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতে যেতে হবে পবনকে।
আজ আদালতের রায়ের পরে নির্ভয়ার মা বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত ফাঁসির দিন মিলল। তবে খুব বেশি খুশি হতে পারছি না। কারণ, এ নিয়ে তৃতীয়বার ফাঁসির দিন ঘোষণা হল। আশাকরি, ৩ মার্চেই ফাঁসি হবে।’’ নির্ভয়ার বাবার মতে, আদালতের রায় বুঝিয়ে দিচ্ছে, দোষীদের দ্রুত সাজা হওয়া জরুরি। তবে ফাঁসির আগে আইনের যাবতীয় রাস্তা ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছে দোষীরা। বিনয় শর্মার প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দেওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল সে। তার আইনজীবীর দাবি, জেলে হওয়া অত্যাচারের কারণে মানসিক অসুখে ভুগছে বিনয়। তবে কেন্দ্রীয় সরকার মেডিক্যাল রিপোর্ট দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আসামির কোনও মানসিক অসুখ নেই। সুপ্রিম কোর্ট বিনয়ের আর্জি খারিজ করে দেয়। এর পরে জেলে অনশন শুরু করেছে সে।