নির্ভয়ার দণ্ডিত অক্ষয়কুমার সিংহ।-ফাইল চিত্র।
নির্ভয়ার দণ্ডিত অক্ষয়কুমার সিংহের ফাঁসির সাজা সংশোধনের আর্জি বা কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রমান্নার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। অক্ষয়কুমার সিংহ শীর্ষ আদালতের কাছে কিউরেটিভ পিটিশনের পাশাপাশি ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসিতে স্থগিতাদেশেরও আর্জি জানিয়েছিল। সেটাও খারিজ করেছে ওই বিচারপতির বেঞ্চ।
একজন সাজাপ্রাপ্ত দোষী যে যে উপায়ে আইনের দ্বারস্থ হতে পারে, তার সর্বোচ্চ উপায়ই হল এই কিউরেটিভ পিটিশন। এর অর্থ দণ্ডিত অক্ষয়কুমার সিংহের সামনে এ বার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানো ছাড়া ফাঁসি রদ বা পিছনোর আর কোনও উপায় রইল না।
তবে অক্ষয়কুমারের আর্জি সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিলেও, সময় যত এগোচ্ছে নির্ভয়ার দণ্ডিতদের ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। কারণ এর মধ্যেই আবার আর এক দণ্ডিত বিনয় শর্মা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতে মিলল করোনাভাইরাস, আক্রান্ত ছাত্র কেরলে
বুধবার রাতে আইনজীবী এ পি সিংহ তার মক্কেল বিনয়ের তরফে হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছেন। আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করলেও তার পর ১৪ দিন সময় পাবে দণ্ডিত। তাই ১ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শনিবার সকাল ছ’টায় ফাঁসি সম্ভাবনা রইল না, এমনই মনে করছেন আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন: এত কিছু করেও আমি সন্ত্রাসবাদী? বিজেপির কটাক্ষে ক্ষোভ কেজরীবালের
নির্ভয়ার দণ্ডিতরা বারেবারেই আইনের ফাঁক কাজে লাগিয়ে ফাঁসির দিনক্ষণ পিছিয়ে চলেছে। শনিবার যে চারজন দণ্ডিতের ফাঁসি হওয়ার কথা, তার মধ্যে মুকেশ সিংহের সামনে আইনের প্রায় সব রাস্তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি আগেই তার প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। তারপর রাষ্ট্রপতির সেই ‘তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে’র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি আর ভানুমতীর বেঞ্চ তা-ও খারিজ করে দিয়েছে।
কী অবস্থায় রয়েছে দণ্ডিতরা
মুকেশ সিংহ
• রিভিউ পিটিশন, কিউরেটিভ পিটিশন, প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ। প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও বুধবার খারিজ হয়েছে। কার্যত আর কোনও রাস্তা খোলা নেই।
অক্ষয়কুমার সিংহ
• রিভিউ পিটিশন খারিজ। কিউরেটিভ পিটিশন জমা পড়ে। বৃহস্পতিবার সেটাও খারিজ হয়ে যায়। এর পরে প্রাণভিক্ষার আর্জির সুযোগ রয়েছে।
পবন গুপ্ত
• রিভিউ পিটিশন খারিজ। এখনও কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করেনি। তা খারিজ হলে প্রাণভিক্ষার আর্জির সুযোগ রয়েছে।
বিনয় শর্মা
• রিভিউ ও কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছে।
মুকেশ ছাড়া বাকি যে তিন দণ্ডিত তিহাড় জেলে রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই (অক্ষয়কুমার সিংহ, পবন গুপ্ত এবং বিনয় শর্মা) রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়ে গিয়েছে। পবন এখনও কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করেনি। অক্ষয়কুমার এবং বিনয়ের কিউরেটিভ পিটিশনও খারিজ হয়ে গিয়েছে কোর্টে। তার মধ্যে বিনয় বুধবার রাতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছে। বাকি দুজন অর্থাৎ অক্ষয়কুমার এবং পবনের সামনে এখনও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোর সুযোগ রয়েছে।
বিনয়ের আইনজীবী এপি সিংহ তার হয়ে যে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছেন, তাতে লেখা রয়েছে, “কেউ যখন আমার কথা শোনেননি, আমার আশা, আপনি সেটা শুনবেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের ওই দিন কী ভাবে আমার জীবন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে… আমি আপনাকে সবটা জানাতে চাই, তার পর বিচার করবেন ফাঁসিই আমার একমাত্র সাজা কি না।”