Gold Business

সোনার স্বপ্ন শেষ বাঙালি কারিগরদের

দিল্লির পুরনো মহল্লা করোলবাগ এবং লক্ষ্মীনগর মিলিয়ে কয়েক লক্ষ স্বর্ণকারের সংখ্যা গত দু’বছরে এক-তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্বর্ণকার সমিতির প্রতিনিধিরা।

Advertisement

অগ্নি রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

ক্রেতা নেই। ফাঁকা দোকানে বসে বিক্রেতা। নিজস্ব চিত্র

সেই ‘সোনার সংসার’ আর নেই মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, নদিয়া ছেড়ে ১৫-২০ বছর আগে দিল্লিতে চলে আসা মানুষগুলোর।

Advertisement

নতুন প্রযুক্তি আসায় শ্রমনির্ভরতা কমে সহজেই উৎপাদন বেড়ে যাওয়া, নোটবন্দি, জিএসটি, দূষণের অভিযোগে দোকান বন্ধের মতো একের পর এক ধাক্কা সামলাতে পারেননি দিল্লির বাঙালি স্বর্ণকার সমাজের বড় অংশ। গত দু’বছরে তাঁদের বড় অংশই তাই বাংলায় গ্রামের পথে ফিরছেন।

দিল্লির পুরনো মহল্লা করোলবাগ এবং লক্ষ্মীনগর মিলিয়ে কয়েক লক্ষ স্বর্ণকারের সংখ্যা গত দু’বছরে এক-তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্বর্ণকার সমিতির প্রতিনিধিরা। তবে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা রাজনৈতিকভাবে এতটাই সঠিক থাকতে চাইছেন যে, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না প্রায় কেউই। মুষ্টিমেয় যাঁরা কথা বলছেন, তাঁরা এমনকি এ-ও বলছেন যে, ‘‘ব্যবসা একটু মন্দা যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু দেশের যাতে ভাল হয় (নোটবন্দি) সেজন্য কিছু বিষয় মেনে নিতেই হবে!’’ অনেকে আবার বলছেন যে, ‘‘আমাদের বেশি চাহিদা তো কিছু নেই। যা আছে সব ঠিকই রয়েছে। কোনও সমস্যা নেই।’’

Advertisement

সমস্যা আছে কী নেই, তা বোঝার জন্য যাওয়া গেল পূর্ব দিল্লির লক্ষ্মীনগরের পিছনে গলিময় সারাফা মার্কেটে। বাঙালি স্বর্ণকারিগর এবং অলঙ্কারের দোকানের মালিকদের বড় জমায়েত সেখানে। শীতের দুপুরে বেশিরভাগই ঝিম মারা দোকান। আধা মলিন দোকানে বসে ছিলেন কিঙ্কর মাইতি। হুগলির খানাকুল থেকে বছর পনেরো আগে চলে এসেছিলেন সামান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে। কালক্রমে গহনার দোকান ফেঁদে বসেছেন। কিন্তু এখন? কিঙ্কর বলছেন, ‘‘আগে এক দিনে ৩০০ গ্রামের কাজ করতেই অনেক লোক লেগে যেত। এখন কাস্টিং মেশিনে দিনে ১ কেজি কাজ তুলে দিচ্ছে। ফলে কারিগরের প্রয়োজনীয়তা কমছে। অন্য দিকে সোনার দাম বাড়ছে, বিক্রি কমছে। জিএসটি-র পর বেশির ভাগ ক্রেতা পাকা বিলে কিনতে চাইছেন না। সরকারের আবার চাপ জিএসটি নিয়েই জিনিস বেচতে হবে! আমরা এখন যাই কোথায় ?’’

আরও পড়ুন: ‘পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে নিরীহদের হত্যা করা হচ্ছে তা জানা আছে’

করোলবাগের স্বর্ণশিল্পী কার্তিক ভৌমিক ২৫ বছর আগে এসেছিলেন কুমোরটুলি থেকে। তাঁর কথায়, ‘‘নোটবন্দির পর লোকের কেনার ক্ষমতা সেই যে কমল, এখনও পর্যন্ত তার বদল হল না। আগে তো পেটের খিদে মেটাবে। তার অনেক পরে তো সোনাদানার প্রশ্ন।’’ কিঙ্কর যেমন বলছেন, ‘‘আমাদের অনেকেই খরচা চালাতে পারছে না দিল্লি শহরে। ভাবছে বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু মাঝবয়সে গ্রামে ফিরে গিয়েই বা কী করবে তা তো জানা নেই, তাই সব পেটে খিল দিয়ে বসে রয়েছে। আমিও তাই।’’

গত এক সপ্তাহে ভোটবাবুদের আনাগোনা স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে মহল্লায়। পান্না জুয়েলার্সের মালিক, হাওড়া থেকে আসা রবিদাস স্বর্ণকার জুটে গিয়েছিলেন আড্ডায়। বললেন, ‘‘ছোট পরিবারগুলি যে নোটবন্দির ধাক্কা সামলে এখনও টিকে থাকতে পারছে, তার জন্য আপ সরকারকে ধন্যবাদ। গণেশ নগরের মহল্লা হাসপাতালে গিয়ে পাঁচ টাকার কার্ড করিয়ে খুবই ভাল চিকিৎসা পাচ্ছি। অনেক স্বাস্থ্য পরীক্ষাই বিনা পয়সায়। বাড়ির বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে পাঠিয়েও আমরা নিশ্চিন্ত। ২০০ ইউনিট করে জল এবং বিজলিতে ছাড় পাচ্ছি।’’

করোলবাগের বিডনপুরা রেগরপুরা এলাকা (যেখানে বাঙালির সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ) তে-ও আপ বিনে গীত নাই! এলাকার লোক পঞ্চমুখ স্থানীয় বিধায়কের প্রশংসায়। কার্তিক ভৌমিকের কথায়, ‘‘বিধায়ক বিশেষ রভী প্রায় সব ব্যাপারে আমাদের পাশে রয়েছেন। সকালে ওঁর অফিসে অভিযোগ জানালে, দু’দিনের মধ্যে রাতে নিজে চলে আসেন।’’

‘সোনার সংসার’ ফিরে আসার স্বপ্ন অবশ্য তাঁরা কেউই দেখছেন না। তবে একটা দিন বাঙালি স্বর্ণশিল্পীদের সঙ্গে কাটিয়ে এটা বোঝা গেল, দিল্লি নির্বাচনের সঙ্গে তাঁদের এই শহরে টিকে থাকার লড়াই জুড়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement