রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
না, কোনও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক গোষ্ঠী নয়। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে গুরুত্ব না-দিয়ে আপাতত এই বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে শুরু করেছে বলে রাজনৈতিক সূত্রে খবর, যাকে বলা হচ্ছে জি৮। এই জি৮-এ রয়েছেন ৭ অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী এবং ১ জন উপমুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের সমন্বয়ের নির্যাস— কংগ্রেসকে বিরোধী ঐক্যের রাশ ধরতে দেওয়া যাবে না। গত কাল মেঘালয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তৃণমূলকে কার্যত বিজেপির ‘এজেন্ট’ বলে মন্তব্য করার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং জি৮ আরও কিছুটা জ্বালানি পেয়ে গিয়েছে বলেই খবর।
কারা রয়েছেন এই জি৮-এ? সূত্রের মতে—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, এম কে স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, ভগবত মান, কে চন্দ্রশেখর রাও এবং তেজস্বী যাদব। এই নেতারা নিজেদের মধ্যে বিরোধী কৌশল নিয়ে আলোচনার পরেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সম্প্রতি কংগ্রেসকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বকে তিনি জানিয়েছেন, “আমাদের কথা শুনলে বিজেপি ১০০-তে আটকে যাবে। আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসুন, না হলে আমরা নিজেদের মতো চলব।”
সূত্রের খবর, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবের সঙ্গে (যিনি ঘোষিত ভাবে জাতীয় বিরোধী রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন) মমতার বৈঠক হবে। এপ্রিলে বিআরএস (তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি এখন ভারত রাষ্ট্র সমিতি) নেতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ডাকা অকংগ্রেসি বিরোধী সমাবেশে তেলঙ্গানায় প্রতিনিধি পাঠাতে পারে তৃণমূল। এই নিয়ে মমতার সঙ্গে রাওয়ের কথাবার্তা চলছে। প্রসঙ্গত, গত বছর যে বিরোধী সমাবেশটি ডেকেছিলেন রাও, মমতা সেখানে প্রতিনিধি পাঠাননি।
কলকাতায় একটি হোটেলে ১৭ থেকে ১৯ মার্চ বসছে এসপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। আলোচনার বিষয় চব্বিশের লোকসভা ভোটের রণকৌশল। দলের নবনির্বাচিত উপাধ্যক্ষ কিরণময় নন্দ দিল্লিতে এ খবর জানিয়ে বলেছেন, “কথা রয়েছে সম্মলনের ফাঁকে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে অখিলেশ চব্বিশের বিরোধী সমন্বয়ের কৌশল নিয়ে বৈঠক করবেন। রাহুল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন এটা আমরা দেখেছি। কিন্তু এখনই এই নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়াতে চাইছি না।” নন্দের বক্তব্য, “কলকাতার আসন্ন কর্মসমিতির বৈঠকে উত্তরপ্রদেশের ২০টি প্রদেশের অধ্যক্ষ যোগদান করছেন। এর পরই শুরু হয়ে যাবে লোকসভার প্রস্তুতি।”
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, “রাহুল গান্ধী মেঘালয়ের ভোটের প্রচারের কথা ভেবে ওই মন্তব্য করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে তিনি নিজের দলকে জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন। আপ, এসপি, বিআরএস-এর মতো দল, যাদের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও রাজ্যে জোট নেই, তারা এর ফলে আরও কাছে আসার সুযোগ পেয়ে গেল। এই দলগুলি তৃণমূলের সঙ্গে জোট সমন্বয় করতে এমনিতেই অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ।” ডেরেকের দাবি, ২ মার্চ মেঘালয়ের ফলাফলের পর যদি দেখা যায় কংগ্রেসের থেকে তৃণমূল সে রাজ্যে বেশি আসন পেয়েছে, তা হলে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে পিছনে রেখে বিরোধী জোটের ভাষ্যটা আরও শক্ত হবে। তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ের কথায়, “কংগ্রেসকে আপাতত বাইরে রেখেই বিরোধী গোষ্ঠী তৈরি হবে। তারা মেঘালয়ে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি সহ্য করতে পারছে না। কংগ্রেস এখন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। এখন নিজেদের মধ্যেই অনৈক্যে কংগ্রেস দুর্বল হয়ে গিয়েছে।”