চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী থাকার সময় নিতিন গডকড়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পটি শুধু দেশের কিছু পিছিয়ে পড়া জেলা তথা ব্লকে রূপায়ণ করা হবে। এ জন্য প্রকল্পে কিছু পরিবর্তনও আনেন তিনি। মন্ত্রিসভার রদবদলের পর নতুন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এখন চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ। তিনি আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প জেলা বা ব্লক বেছে রূপায়ণ করা হবে না। দেশের সর্বত্র তা সমান ভাবে রূপায়িত হবে।” তাঁর বক্তব্য, “গোটা দেশে এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিছু এলাকার জন্য নয়!”
যদিও অন্য কথা শুনিয়েছেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকেরই এক আমলা। নতুন মন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ ক’দিন আগেও ছিলেন কংগ্রেসে। ইউপিএ জমানাতেই শুরু হয়েছিল ওই প্রকল্প। এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই আমলা মত প্রকাশ করেন, বীরেন্দ্রর মধ্যে এখনও কংগ্রেসেরই মতাদর্শ ও মনোভাব রয়েছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকারের মনোভাব ভিন্ন। তাই বীরেন্দ্রর দাবি ও মন্তব্যের পরেও যে প্রকল্পের শর্ত শিথিল হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। কারণ, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত।
ইউপিএ জমানায় শুরু হওয়া এই প্রকল্প নিয়ে তর্ক চলছে বহু দিন ধরেই। অর্থনীতিকদের অনেকের মতে, সরকারি কোষাগার থেকে এই ধরনের খয়রাতি বন্ধ হোক। কারণ, এই প্রকল্পে এত হাজার কোটি টাকা খরচ করেও কোনও স্থায়ী সম্পদ তৈরি হচ্ছে না। উন্টে দুর্নীতি হচ্ছে প্রচুর। বস্তুত সে কারণেই, ইউপিএ জমানার শেষ দিকে প্রকল্প রূপায়ণের শর্ত কিছুটা পরিবর্তন করে স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে যাঁরা কাজ পাচ্ছেন, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে তাঁদের সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাও শুরু হয়।
কিন্তু কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার আসার পরে এই প্রকল্প রূপায়ণের শর্ত আরও কিছু বদল আনেন তৎকালীন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গডকড়ী। তিনি সিদ্ধান্ত দেন, বেছে বেছে দেশের দু’শোটি জেলার আড়াই হাজার পিছিয়ে পড়া ব্লকে এই প্রকল্পের রূপায়ণ হবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্প বাবদ খরচের নিয়মও বদল করে মন্ত্রক। প্রথমে স্থির হয়, প্রকল্প বাবদ খরচের মধ্যে ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করা হবে মজুরি হিসেবে, ৪০ শতাংশ অর্থ খরচ হবে নির্মাণ সামগ্রীর জন্য। পরে তা ফের পরিবর্তন করতে গডকড়ী প্রস্তাব দেন, শতকরা ৫১ ভাগ টাকা মজুরি বাবদ, বাকি ৪৯ ভাগ নির্মাণ সামগ্রী বাবদ খরচ করা হোক।
কিন্তু অর্থনীতির জগতের ২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তা নিয়েই আপত্তি তোলেন। জঁ দ্রেজ, দিলীপ অ্যাদ্রু, প্রণব বর্ধন, অনির্বাণ কর, জয়তী ঘোষ তাঁদের অন্যতম। তাঁরা মোদীকে চিঠি লিখে বলেন, দয়া করে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের নিয়ম শিথিল করবেন না। মজুরি বাবদ খরচ কমানো মানে আরও কম মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় কাজ পাবেন। গ্রামের হতদরিদ্রদের জীবন তাতে বিপন্ন হবে। বস্তুত আজ সেই সুরেই কথা বলেন নতুন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। বীরেন্দ্র সিংহের বক্তব্য, দেশে এমন অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানকার মানুষ এখনও পাঁচশো টাকার নোট পর্যন্ত দেখেননি। একমাত্র রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের কাছে পৌঁছতে পেরেছে সরকার। তাই এই প্রকল্পের শর্ত লঘু করার কোনও প্রশ্ন নেই।
স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে বেশি জোর দেওয়ার যে নীতি নিয়ে এগোতে চাইছিলেন নিতিন গডকড়ী। এখন বীরেন্দ্রর উল্টো পথে চলাটা কি মোদী-জেটলির অনুমোদন পাবে? প্রশ্ন রয়েছে বীরেন্দ্রর মন্ত্রকেই।