তখন অরুণা। ছবি: এএফপি।
তাঁর চলে যাওয়া আত্মীয়বিয়োগের মতো যন্ত্রণার মনে হয়েছে কয়েক জনের কাছে। আবার অনেকে মনে করছেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে সুদীর্ঘসময় জীবন্মৃত হয়ে থাকার থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়েছে মৃত্যু।
অরুণা শানবাগ। হাসপাতালের মেট্রন অরুন্ধতী ভেনহল টেলিফোনে জানিয়েছেন, গত দেড় বছর নাকে লাগানো নলে স্যুপ, ফলের রস, ডালের জল দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। তাঁরাই অরুণাকে পরিচ্ছন্ন করে রাখতেন, ওষুধ খাওয়াতে। সকলেই একান্ত আপনার মনে করতেন অরুণাকে। সোমবার তাই তাঁর মৃত্যুতে হাসপাতালের নার্সরা প্রিয়জন হারানোর শোক পেয়েছেন।
আবার এ দিন তাঁর মৃত্যু শান্তি দিয়েছে পিঙ্কি ভিরানির মতো অনেককে, যাঁরা মনে করছেন, এই ৪২টা বছর মৃত্যু-যাতনা পেয়েছেন অরুণা। পিঙ্কি বলেন, ‘‘১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাতেই তো অরুণার মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল। তার পর যেটা হল সেটা শুধুই ‘চিকিৎসা-রাজনীতি’!
কে এই পিঙ্কি ভিরানি? কী ভাবেই বা তাঁর সঙ্গে জড়িত অরুণা শানবাগ এবং পরোক্ষ নিষ্কৃতিমৃত্যু?
আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন পিঙ্কি। মা রোশেনারা মোদীর মুখে অরুণার কাহিনি শুনে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে যান। ক্রমশ যাতায়াত বাড়ে। তিনিই ২০০৯ সালে অরুণার নিষ্কৃতি-মৃত্যুর আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। পিঙ্কির অভিযোগ, ‘কিংগ এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতাল’-এর চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁদের সুনাম রক্ষার তাগিদে অরুণার নিষ্কৃতি-মৃত্যুর আবেদনে সাড়া দেননি। তবে নার্সরা সে সময়ে আদালতকে জানিয়ে ছিলেন, অরুণা তাঁর নিজের মতো করে তাঁদের ডাকে সাড়া দেন। তাঁকে কখনওই জীবন্মৃত বলা যায় না।
পিঙ্কির আরও অভিযোগ, অরুণার মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণ (অরুণার ক্ষেত্রে পায়ু-ধর্ষণ হয়েছিল) বিষয়টারই উল্লেখ করেনি। ফলে, মাত্র সাত বছর জেল খেটেই অভিযুক্ত সোহনলাল মুক্তি পেয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের ডিন অবিনাশ সুপে বলছেন, ‘‘ঘটনাটি অনেক আগের। তখন রিপোর্টে কেন ধর্ষণ লেখা হয়নি এখন বলতে পারব না।’’
পিঙ্কির দাবি, চিকিৎসাশাস্ত্রের অনেক উন্নতি হলেও অরুণার সাড় ফেরাতে আধুনিক চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও অরুণাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন পিঙ্কি। তিনি বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালটির সব সময় ভয় ছিল, অরুণার জ্ঞান ফিরে গেলে বাল্মিকীর শাস্তির ব্যাপারে তাদের গাফিলতি প্রমাণিত হয়ে যাবে। তাই ওরা গত ১০ বছর ওর সব রকম চিকিৎসা বন্ধ করে শুধু দেখাশোনার উপর রেখে দিয়েছিল।’’
দশ বছরে তাঁকে সুস্থ করার জন্য কী কোনও আধুনিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ হয়েছে? এই প্রশ্নে হাসপাতালের মেট্রন জানান, সে রকম ভাবে কোনও চিকিৎসা করা হতো না অরুণাদেবীর। শুধু নার্সিং হতো। চিকিৎসকদের মত ছিল, তাঁর মস্তিষ্কের স্টেমসেলের যা ক্ষতি হয়েছে তা কোনও চিকিৎসায় সা়রবে না। হাসপাতালের ডিন-ও দাবি করেছেন, ‘‘অরুণার চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি ছিল না।’’