খোঁজাখুঁজিই সার। বিকল্প পথে আয়ের মুখ দেখেনি রেল। এ বার তাই পথ খুঁজতে সরাসরি জনতার দরবারে রেল ভবন!
রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরাতে বিকল্প পথে বারবারই সরব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কিন্তু নানা দিকে হাতড়েও গত তিন বছরে যাত্রিভাড়া এবং পণ্য পরিবহণ ছাড়া অন্যান্য খাতে উল্লেখযোগ্য হারে আয় বাড়াতে পারেনি রেল। এ বার বিকল্প পথ বাতলাতে জনতার কাছে আর্জি জানাচ্ছে রেল। সূত্রের খবর, রেল ভবন থেকে প্রতিটি ডিভিশনের কাছে এই নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।
তবে শুধু সুপারিশ দিলেই হবে না। রেল জানিয়েছে, সুপারিশপত্রের সঙ্গে ১ হাজার টাকাও জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট নাগরিককে। অত্যুৎসাহীদের আজেবাজে সুপারিশ এড়াতেই এই পরিকল্পনা। যা কোনও স্টেশন বা ডিভিশন ভিত্তিক হতে পারে বা পরিকাঠামো নির্ভরও হতে পারে।
বস্তুত, গত তিন বছরে প্ল্যাটফর্মে ডিসপ্লে মনিটর বসানো, বিজ্ঞাপন সংস্থাকে হোর্ডিং ভাড়া দেওয়া, ট্রেনের গায়ে বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ড প্রচার করা, প্রথম সারির স্টেশনগুলি ৪০ বছরের জন্য সরাসরি লিজ দেওয়ার মতো নানা পরিকল্পনা বের করেছিলেন রেলকর্তারা। কোনওটিই লাভের মুখ দেখেনি। রেলের একাংশই বলছেন, ‘‘আমাদের কর্তারা ভেবেছিলেন, রেলের নাম শুনেই বিজ্ঞাপনদাতা ঝুলি উপুড় করে দেবেন। কিন্তু বাজার অর্থনীতি এবং বিজ্ঞাপন জগত যে ভিন্ন ভাবে চিন্তা করে তা মাথায় আসেনি।’’
রেলের খবর, বিমানের বিজনেস ক্লাসের মতো ট্রেনের প্রথম শ্রেণিতে বিভিন্ন বিনোদনমূলক চ্যানেল চালানোর কথা ভেবেছিলেন। সেই পরিকল্পনা লাল ফিতের ফাঁসে আটকে গিয়েছে। সম্প্রতি সারা দেশের ৬০০টি স্টেশন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা যোগাড় করার জন্যও একই রকম পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তাতে কতটা সাড়া মিলেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
রেলের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রকল্প নিয়েও রেলের কাছে চুক্তি করা যেতে পারে। পরিকল্পনার বাস্তবতা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। তবে এই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে স্থায়ী নির্মাণ করা চলবে না।
এ বারও রেলকর্তাদের জন-সুপারিশের পরিকল্পনা নিয়ে নানা মহলে রসিকতা শুরু হয়েছে। রেলেরই একাংশ জানাচ্ছেন, একে তো জনতার পরামর্শের সঙ্গে ১ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। তার উপরে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রেলের পকেট ভরবে কিন্তু পরামর্শদাতা শুকনো ধন্যবাদ ছাড়া কিছুই পাবেন না। ‘‘একে তো মাথা খাটিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করবে। তার উপরে নিজের গাঁট থেকে ১ হাজার টাকাও রেলকে দিতে হবে! ক’জন রাজি হবে বলুন তো?’’ প্রশ্ন এক রেলকর্তার।
এ সব দেখে এক রসিক রেল অফিসারের টিপ্পনী, ‘‘হুজুগে লোক তো কম নেই। এই পরামর্শ চাওয়ার বিকল্প পথেই যদি কিছু আয় হয় ক্ষতি কী?’’