কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ‘মাটি সংকল্প’ যাত্রায় শিশু কোলেই গাড়ির মাথায়। রবিবার নয়াদিল্লির গাজিপুর সীমানায়। কৃষি আইন নিয়ে কাল, মঙ্গলবার প্রথম বার বৈঠকে বসবে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি। পিটিআই
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি প্রথম বারের জন্য বৈঠকে বসবে আগামী মঙ্গলবার। সেই দিনই কৃষকদের সঙ্গে দশম দফার বৈঠকে বসবে সরকার। তার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ কর্নাটকের বাগালকোটে এক কৃষি প্রকল্পের উদ্বোধন করে বলেন, “কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করাটা নরেন্দ্র মোদী সরকারের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। কৃষকদের আয় যাতে বহু গুণ বাড়ে, সেটাই নিশ্চিত করবে কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন।”
যদিও শীর্ষ আদালত আইন তিনটির উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে গত ১১ তারিখ। সেই সঙ্গে তিন আইনের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের সমাধান খুঁজতে চার কৃষি বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু পক্ষপাতের প্রশ্ন ওঠায় ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের সভাপতি ভূপেন্দ্র সিংহ মান গত সপ্তাহে কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। কমিটির বর্তমান সদস্যরা হলেন অনিল ঘনওয়ট, অশোক গুলাটি ও প্রমোদকুমার জোশী। ঘনওয়ট আজ জানিয়েছেন, শীর্ষ আদালত নতুন কাউকে কমিটিতে না-আনলে, তিন জনেই কমিটির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আন্দোলনকারী কৃষকরা অবশ্য এখনও আদালত-নিযুক্ত কমিটির সঙ্গে সঙ্গে বসতে রাজি নন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরুর আগে মঙ্গলবার কমিটির তিন সদস্য নিজেদের মধ্যে প্রথম দফার আলোচনা করে নেবেন দিল্লির পুসা ক্যাম্পাসে।
আদালত কমিটি নিয়োগ করলেও সরকার সমান্তরাল আলোচনা চালাচ্ছে। এ নিয়ে ঘনওয়ট বলেন, “ওরা ওদের আলোচনা চালিয়ে যাক। আমাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সেটা করব। কোনও একটি থেকে যদি সমাধান বেরিয়ে আসে ও আন্দোলন শেষ হয়, তাতে আমাদের আপত্তি বা অসুবিধের কিছু নেই।”
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমর জানিয়েছেন, কৃষকদের সঙ্গে পরের বৈঠকটি হবে মঙ্গলবার। তোমরের কথায়, “আশা করব, তিন কৃষি আইনের ধারাগুলি ধরে ধরে আলোচনা হবে দশম বৈঠকে। মন্ডী, ব্যবসায়ীদের রেজিস্ট্রেশন ও অন্য যে বিষয়গুলি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সংশয় রয়েছে, বৈঠকে সেগুলি দূর করতে সরকার রাজি। ফসলের গোড়া পোড়ানো বন্ধের আইন, বিদ্যুতের বিল নিয়েও কথা বলতে সম্মত হয়েছে সরকার। সেই অনুযায়ী বার্তাও দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। কিন্তু তাঁরা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থাকায় গত ন’দফার আলোচনায় মীমাংসায় পৌঁছনো যায়নি। “শীর্ষ আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে আপাতত কৃষি আইন তিনটি কার্যকর করা যাবে না,” এ কথা উল্লেখ করেও কৃষিমন্ত্রী আজ ফের দাবি করেন, “বেশির ভাগ কৃষকই আইনগুলির পক্ষে।”
মঙ্গলবারের দুই বৈঠকের আগে, আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। কৃষি আইন ও দিল্লির সীমানায় কৃষকদের আন্দোলন সংক্রান্ত আবেদনগুলি নিয়ে শুনানি হবে। উঠবে আদালত গঠিত কমিটি থেকে ভূপেন্দ্র সিংহ মানের অব্যাহতি নেওয়ার প্রসঙ্গও।
সংযুক্ত কিসান মোর্চা ২৬শে দিল্লির আউটার রিং রোডে শান্তিপূর্ণ ভাবে ‘কিসান রিপাবলিক ডে প্যারেড’ করতে চায়। যেখানে জওয়ানদের সঙ্গে ট্যাবলো নিয়ে থাকবেন অন্নদাতারা। যাঁরা দিল্লিতে আসতে পারছেন না, তাঁদের নিজ রাজ্যের রাজধানীতে এমন প্যারেডের আয়োজন করার ডাক দিয়েছে তারা। ২৬ জানুয়ারি কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল বা প্যারেডের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। কাল সুপ্রিম কোর্টে তা নিয়েও শুনানি হওয়ার কথা।
আন্দোলনের ৫৪তম দিনে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত আজ নাগপুরে ঘোষণা করেছেন, দিল্লির সীমানায় আগামী লোকসভা ভোট অর্থাৎ ২০২৪-এর মে মাস পর্যন্ত ‘আদর্শের সংগ্রাম’ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন কৃষকরা। নিষিদ্ধ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংক্রান্ত এক মামলায় এনআইএ কৃষক নেতা বলদেব সিংহ সিরসা, অভিনেতা দীপ সিধু-সহ ৪০ জনকে সমন পাঠিয়েছে। কৃষক আন্দোলনে সমর্থন করেছিলেন বলেই এঁদের হয়রান করা হচ্ছে এই অভিযোগ এনে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচলা করেছেন সুখবীর সিংহ বাদল ও অন্য অকালি নেতারা।