ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী বলতেন, গান্ধী পরিবারের সদস্যরা হলেন ‘নামদার’। আর সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা তিনি হলেন ‘কামদার’।
কর্নাটকের বিদারের গরিব দলিত পরিবারের সন্তান, সাধারণ কারখানার কর্মীর পুত্র, শ্রমিক রাজনীতি করে উঠে আসা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে সভাপতির আসনে বসিয়ে এ বার কংগ্রেস নেতৃত্ব আশা করছেন, বিজেপির পরিবারতন্ত্র ও গান্ধী পরিবারকে আক্রমণের তির অনেকটাই ভোঁতা করে দেওয়া যাবে।
আজ খড়্গে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিজেপি শিবিরও নতুন করে রণকৌশল সাজাতে শুরু করেছে। বিজেপি শিবিরের খবর, এত দিন নরেন্দ্র মোদী ছিলেন ওবিসি মুখ। এ বার জগজীবন রামের পরে কংগ্রেসের সভাপতি পদে ফের কোনও দলিত নেতা। খড়্গে নিজে তাঁর দলিত পরিচিতি কাজে লাগাতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এ বার থেকে কংগ্রেস সভাপতিকে নিশানা করার সময় তাঁর দলিত পরিচিতি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলে দলের নেতারা মনে করছেন।
বিজেপি নেতাদের দাবি, সভাপতি যে-ই হোন, দলের নিয়ন্ত্রণের রাশ থাকবে গান্ধী পরিবারের হাতেই। যা থেকে স্পষ্ট, খড়্গের বদলে রাহুল তথা গান্ধী পরিবারকেই নিশানা করার কৌশলে বিজেপি অনড় থাকবে। উল্টো দিকে মনমোহন সিংহের মতোই খড়্গে গান্ধী পরিবারের রিমোট-কন্ট্রোল দ্বারা চালিত বলে প্রচার করা হবে। বিজেপির আইটি সেলের ভারপ্রাপ্ত নেতা অমিত মালব্যের বক্তব্য, ‘‘গান্ধী পরিবার যদি মনমোহন সিংহের মতো প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নাক গলাতে পারে, সেখানে খড়্গে তো নিছক কংগ্রেস সভাপতি।’’ বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অনগ্রসর শ্রেণির নেতা সীতারাম কেশরীকেও কংগ্রেস সভাপতি পদে বসিয়ে লাঞ্ছনা করা হয়েছিল। খড়্গে গরিব পরিবার থেকে উঠে এলেও তাঁর বিরুদ্ধে ৫০ হাজার কোটি টাকার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগ রয়েছে। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলাতেও ইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
খড়্গে আজ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হয়েই বিজেপি-আরএসএস, মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন। সেই সঙ্গে খড়্গে বলেন, ‘‘এথন আমাদের সবাইকে কংগ্রেস কর্মী হিসেবে কাজ করতে হবে। এখানে কেউ ছোট, কেউ বড় নয়। সবাই সমান। দেশের সংবিধানের উপরে আঘাত ও গণতন্ত্র শেষ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাই মিলে লড়তে হবে। সাম্প্রদায়িকতার উর্দি পরিহিত ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে, যারা সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপরে হামলা করছে।’’
সামনেই গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের নির্বাচন। আগামী বছর রাজস্থান, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো বড় রাজ্যে নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচনের দেড় বছর বাকি। কংগ্রেসের সকলেই একমত, সংগঠনকে ফের চাঙ্গা করাই খড়্গের সবথেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ। সভাপতি নির্বাচনে খড়্গের প্রতিদ্বন্দ্বী শশী তারুর আজ বলেছেন, কংগ্রেসের কর্মীদের সঙ্গে দলের সংযোগ ছিন্ন হয়েছে। খড়্গে বলেন, ‘‘আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করব। অন্যান্য চ্যালেঞ্জের সঙ্গেও লড়ব।’’ কংগ্রেস নেতাদের আশা, সংগঠনের ব্লক স্তর থেকে উঠে আসার খড়্গের অভিজ্ঞতা সংগঠনে কাজে লাগবে। রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল।
সভাপতি হয়ে উদয়পুর চিন্তন শিবিরের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে খড়্গেকে সংগঠনে নতুন মুখ তুলে আনতে হবে। আবার প্রবীণদের বাদ দিলেও চলবে না। সনিয়া ৭৫ বছর বয়সে সভানেত্রীর ইনিংস শেষকরার আগে পর্যন্ত এই নবীন-প্রবীণের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। খড়্গে নিজে ৮০ বছরবয়সি হয়ে প্রবীণদের দরকার নেই বলতে পারবেন না। খড়্গে-পুত্র, কর্নাটকের বিধায়ক প্রিয়াঙ্ক বলেন, ‘‘বাবা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে, দলের কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে সংগঠনকে মজবুত করবেন। তৃণমূল স্তরে নতুন করে সংগঠন তৈরি করতে হবে। ক্যাডারদের উৎসাহিত করতে হবে। চ্যালেঞ্জগুলো স্পষ্ট। বাবার দিশাও স্পষ্ট।’’