সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এই সব মিম।
‘বিনোদ’। শাহরুখ খানের বিখ্যাত সংলাপ ধার করে বলাই যায়, ‘নাম তো সুনা হি হোগা’!
নামই যথেষ্ট। এবং নামটাই সার! গত কয়েক সপ্তাহে সমাজমাধ্যমের দৌলতে নামটি যে-ভাবে ‘ভাইরাল’ হয়েছে, তাতে নেট-নাগরিকেরা তো বটেই, তার বাইরেও অনেকের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে এই নাম। সোশ্যাল মিডিয়ার মঞ্চে মিম-মজা তো বটেই, বিপণন টানতে একের পর এক বাণিজ্যিক সংস্থাও ‘বিনোদে’ মজেছে। শামিল একাধিক রাজ্যের পুলিশও।
ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত গত ১৫ জুলাই। ওই দিন একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিল ‘স্লে পয়েন্ট’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল। বর্তমান প্রজন্মের পছন্দের নানা বিষয়ে ভিডিয়ো তৈরির জন্য বেশ জনপ্রিয় বছর বাইশের অভ্যুদয় মোহন এবং বছর একুশের গৌতমী কাওয়ালের এই চ্যানেল। ভিডিয়োটির নাম— ‘হোয়াই ইন্ডিয়ান কমেন্ট সেকশন ইজ় গারবেজ (বিনোদ)’। সেখানে তাঁদের নানা ভিডিয়োর নীচে আসা একগুচ্ছ আজব কমেন্ট তুলে ধরেন তাঁরা। একটি ভিডিয়োর নীচে ‘বিনোদ থারু’ নামে একটি প্রোফাইল থেকে শুধু ‘বিনোদ’ লেখা হয়েছিল কমেন্টে। ভিডিয়োয় উল্লেখ করা হয় সেটাও। সেই সূত্র ধরেই এর পর ভাইরাল হয়ে যায় ‘বিনোদ’ নামটি! বিভিন্ন ভিডিয়োর কমেন্ট সেকশনে গিয়ে ‘বিনোদ’ লিখে কমেন্ট করতে থাকেন নেট নাগরিকেরা। টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসে ‘বিনোদ’।
মুম্বই পুলিশের টুইট।
ডেটিং অ্যাপ থেকে শুরু করে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, নিজেদের মতো করে এই ট্রেন্ডকে আপন করে নেয় একাধিক সংস্থাও। যেমন, মজার ছলেই পেটিএম-এর টুইটার হ্যান্ডলের নাম ‘বিনোদ’ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন এক যুবক। তা মেনে সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের লোগো পাল্টে ‘বিনোদ’ করে দিয়েছিল ওই ডিজিটাল ওয়ালেট সংস্থাটি। নেটের এমন হিড়িককে কাজে লাগিয়ে মনোযোগ টানার এই চেষ্টা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ‘মোমেন্ট মার্কেটিং’ বলে পরিচিত। যা গত বছর দেখা গিয়েছিল জনপ্রিয় টিভি শো ‘গেম অব থ্রোনস’-এর সময়। ‘গৃহবন্দি’ ক্রেতাদের নজর টানতে সেই রেওয়াজই ফের ফিরে এল ‘বিনোদ’-এর হাত ধরে।
নাগরিক নিরাপত্তার প্রচারেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বিনোদ’কে হাতিয়ার করেছে মুম্বই, নাগপুর এবং সুরাত পুলিশ। ‘বিনোদের’ নামে আর্থিক নিরাপত্তার পাঠ দিতে দেখা গিয়েছে এসবিআই-কেও। ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ অনন্যা বিশ্বাসের মতে, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে সব বয়সের মানুষেরই ডিজিটাল নির্ভরতা বেড়েছে। যে কারণে আগের চেয়ে এমন ট্রেন্ডে মানুষ আরও বেশি করে আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফলে সে সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি সংস্থাগুলিও।’’
কিন্তু বিনোদ কেন শুধুমাত্র নিজের নাম ‘বিনোদ’ লিখে মন্তব্য করলেন? এতে ‘স্টান্ট মানসিকতা’ বা নিজেকে আলাদা করে জাহিরের একটা প্রবণতার ছাপ রয়েছে বলে মত মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের। যা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এমনিতেই বেশ প্রচলিত। সেই সঙ্গে গৃহবন্দিদশায় তার আরও বাড়বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর মতে, বর্তমানে ডিজিটাল জীবনে আরও বেশি করে অভ্যস্ত মানুষের কাছে ‘ভার্চুয়াল’ এবং ‘রিয়্যালিটি’র ফারাকটা অস্পষ্ট হচ্ছে দিন দিন। তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে করোনার জেরে তৈরি হওয়া গৃহবন্দি দশা। নীলাঞ্জনাদেবীর কথায়, ‘‘এই ‘বন্দি’ মানসিকতা থেকে খানিক মুক্তির স্বাদ পেতেই হয়তো ভার্চুয়াল মাধ্যমের এই ‘বিনোদের’ হাত ধরে বিনোদন খুঁজে নিতে চেয়েছেন মানুষ।’’