প্রশ্নপত্র ফাঁস বা মাতৃভাষায় প্রশ্নপত্র না-পাওয়ার মতো বিতর্ক চলছে। তার মধ্যেই ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট বা নিট-এর ফল প্রকাশ করা হল সোমবার।
সিবিএসই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ৬ মে দেশ জুড়ে এমবিবিএস এবং বিডিএসের এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন ১২.৬৯ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে এ রাজ্যের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। উত্তীর্ণ হয়েছেন মোট ৭.১৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী। ৯৯.৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন বিহারের কল্পনা কুমারী।
১৩৬ পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে গুরুগ্রাম কেন্দ্রের এক পরীক্ষার্থী প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলে মামলা করেন। ফলপ্রকাশে স্থগিতাদেশের আবেদন খারিজ করে দিল্লি হাইকোর্ট জানায়, শেষ মুহূর্তে ফল বাতিলের আবেদন শোনা সম্ভব নয়। সিবিএসই আদালতে জানায়, কোথাও প্রশ্নপত্র কম পড়েনি বা ফাঁস হয়নি। কিছু সরকারি ও বেসরকারি কলেজের বিরুদ্ধে দালাল চক্রের সাহায্যে পাশ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত চেয়েছিল সিবিএসই। সেই তদন্ত কত দূর এগোল, সেই বিষয়ে একটি রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত। সেটিকে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে ধরে শুনানি হবে জুলাইয়ে।
এ রাজ্যের কলকাতা ও কোন্নগর কেন্দ্রে পর্যাপ্ত প্রশ্নপত্র না-থাকা এবং বাংলা ভাষায় প্রশ্নপত্র না-পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে চিঠিও দিয়েছিলেন। সেই চিঠির উত্তর দেওয়া হবে বলে জাভড়েকর জানিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রের স্কুলশিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপ জানান, ‘‘নিট নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি।’’
আরও পড়ুন: এনসিইআরটি’র পাঠ্যবইয়ে রদবদল, শুরু বিতর্ক
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সংসদে বিষয়টি তোলার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে তৃণমূলের অন্দরে। ডিএমকে-র সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা চলছে। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, নতুন নিয়মে ২০১৭ সালে রাজ্যের বোর্ডের পড়ুয়াদের মাত্র সাত শতাংশ নিটে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ভবিষ্যতেও এমন হতে পারে। তাই সমাধানসূত্র হিসেবে শিক্ষাকে যৌথ তালিকার পরিবর্তে রাজ্য তালিকায় আনা দরকার বলে মনে করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। নিটের আওতার বাইরে থাকতে চাইছে রাজ্য।
ফল ঘোষণার পরেই রাজ্যের মেধা-তালিকা প্রকাশের দাবি তুলেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। তাদের দাবি, কেন্দ্রের তালিকায় স্থান দেখে রাজ্যে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়। ৭ জুন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে ছাত্র সংগঠনগুলি ফের আলাদা ভাবে মেধা-তালিকা প্রকাশের দাবি তুলবে।
২০১৭ সালেও এ রাজ্যে আলাদা ভাবে কোনও মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। কাউন্সেলিং শুরু হওয়ার আগেই নিট-উত্তীর্ণদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্য ভবনে এক হাজার টাকা জমা দিতে হয়। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প়ড়ুয়া এবং অভিভাবকদের। এই হেনস্থা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।