সংসদে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
রাষ্ট্রপতি ভাষণের জবাবে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে কৃষক আন্দোলন নিয়ে সোমবার সংসদে কড়া বার্তা দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করে ‘আন্দোলনজীবী’ বলে মন্তব্য করেন। বলেন এঁরা ‘পরজীবী’। এঁদের ছুড়ে ফেলতে হবে।
সোমবার মোদী কৃষক আন্দোলনকারী এবং তাঁদের সমর্থকদের কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আমরা শ্রমজীবী শব্দটা শুনেছি। কিন্তু এখন একটা নতুন প্রবণতা এসেছে ‘আন্দোলনজীবী’। এই আন্দোলনজীবীদের থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হবে। এই আন্দোলনজীবীদের চিহ্নিত করতে হবে। কারণ এঁরাই দেশের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এই আন্দোলনজীবীরাই দেশের ‘পরজীবী’। এই ‘পরজীবী’দের তুলে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে।’’
বদল আনা জরুরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগনোও প্রয়োজন। কিন্তু সেই অগ্রগতির পথে আজ বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৩ কৃষি বিল নিয়ে সরব বিরোধীদের বিরুদ্ধে এ ভাবেই সংসদে বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পাশাপাশি তিনি এটাও জানান, আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু এর পাশাপাশি কৃষকদেরও বোঝানো উচিত যে দেশের অগ্রগতির জন্য বদল আনা জরুরি। কিন্তু তা না করে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলেও সোমবার সংসদে অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এক সময় এই সংস্কারের পক্ষে অনেকেই ছিলেন। আজ যখন মোদী সরকার এই সংস্কার কার্যকর করতে চলেছে, সেই ব্যক্তিরাই এখন উল্টো সুর ধরেছেন।”
মোদীর পরবর্তী বক্তব্য, ‘‘নতুন ঘর সাজাতে গেলে যেমন একটু সময় লাগে, তেমনই নতুন কোনও বিষয় আনার পর তা নিয়ে একটু আধটু টানাপড়েন চলতেই পারে। কিন্তু সার্বিক ভাবে সেই টানাপড়েনকে জারি রাখা মোটেই ঠিক নয়। এতে দেশের অগ্রগতি হয় না।’’
রেকর্ড উৎপাদনের পরেও দেশের কৃষিব্যবস্থায় অনেক সমস্যা আছে বলেও সংসদে সোমবার মন্তব্য করেন মোদী। তবে সেই সমস্যার সমাধান সকলে মিলেই করা উচিত বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘থমকে থাকাটা কি ভাল? দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা কি কাম্য নয়? দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাই সকলকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি, কৃষকদের এই আইন নিয়ে বোঝাতে হবে।’’
মোদীর কথায়, “দেশকে এগিয়ে নিয়ে উচিত। পিছনে ঠেলে দেওয়া নয়। বিরোধী হোক বা আন্দোলনকারী সকলে মিলে এই সংস্কারকে এক বার কার্যকর হওয়ার সুযোগ দিন।” সোমবার ফের আশ্বস্ত করেন মোদী, ‘‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে যে ভ্রম তৈরি করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল, আছে এবং থাকবে।’’
এর পরই মোদীর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘এ বিষয়ে আমরা যদি আরও দেরি করি, তা হলে আরও সর্বনাশের পথে এগোব। তাই সবাইকে এ বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যের পথে আসতে হবে। আগে ছোট কৃষকদের জল কিনতে হত। ছোট কৃষকদের ইউরিয়া কেনার জন্য রাতভর লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হত। সেই কৃষকদের উন্নয়নের জন্যই কাজ করছি আমরা।’’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘ফসল বিমা যোজনার সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে। ছোট ছোট কৃষকদের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। পেনশন প্রকল্প চালু করা হয়েছে ছোট কৃষকদের জন্য। এ ছাড়া কিসান ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে।’’
প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন মোদী। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা কতটা উপকৃত হয়েছেন বা হচ্ছে তা ব্যখ্যাও করেছেন তিনি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ কোটি গরিব কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এর পরই পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। সেখানে রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু হতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন মোদী। মমতার সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি বলেন, “বাংলায় যদি এই যোজনা নিয়ে রাজনীতি না করা হত, তা হলে আরও বেশি সংখ্যক কৃষক এই যোজনায় উপকৃত হতেন।”