দিল্লির কাছে গাজ়িপুর সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকেরা। শনিবার। পিটিআই
শনিবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের কৃষি সংস্কারের জয়গান করে বলেছিলেন, “ছয় মাস আগে জারি করা তিন কৃষি আইনের অধ্যাদেশের সুফল ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা। তার ১২ ঘণ্টার মধ্যে হরিয়ানার বিজেপি জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর কেন্দ্রের উপর কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য চাপ তৈরি করলেন।
বিজেপির আর এক শরিক, রাজস্থানের লোকতান্ত্রিক পার্টির নেতা হনুমান বেনীওয়াল তিনটি সংসদীয় কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়ে জানিয়ে দিলেন, আগামী সপ্তাহেই তাঁরা এনডিএ ত্যাগ করতে পারেন। পুরনো শরিক অকালি দলের পর বেনীওয়াল সত্যিই এনডিএ ছাড়লে এনডিএ-র দলের সংখ্যা আরও কমবে।
পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃত্বে দিল্লি অবরোধ শনিবার ২৩ দিনে পড়েছে। আন্দোলনে মৃত ২০ জনের বেশি কৃষককে শ্রদ্ধা জানাতে রবিবার কৃষক সংগঠনগুলি শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস পালন করবে। চলতি সপ্তাহেই হরিয়ানার করনালের গুরুদ্বারার সন্ত রাম সিংহ কৃষকদের উপর জুলুমের প্রতিবাদে আত্মঘাতী হয়েছেন। এতে হরিয়ানায় কৃষকদের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে।
ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েই শনিবার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে এসে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, খট্টর অচলাবস্থা কাটিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য কৃষিমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। বৈঠকের পর খট্টর বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যে কৃষকদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। আমি কেন্দ্রকে সে কথাই বলেছি।’’
হরিয়ানার বিজেপি নেতা চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ শুক্রবারই কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। আজ বিজেপির শরিক নেতা হনুমান বেনীওয়াল শিল্প মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পিটিশন কমিটি, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। বেনীওয়াল জানান, ২৬ ডিসেম্বর তাঁরা এনডিএ-তে থাকা বা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এনডিএ ত্যাগ মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ, তাঁর দল কৃষকদের সঙ্গে থেকেছে। রাজস্থানের তিনটি উপ-নির্বাচনেও আলাদাই লড়বেন।
শুধু রাজনৈতিক স্তরে নয়। শিল্পমহলের তরফেও মোদী সরকারের উপরে কৃষকদের অবরোধের সমস্যার সমাধান করার উপরে চাপ তৈরি হয়েছে। ফিকি, সিআইআই, অ্যাসোচ্যাম-তিনটি বণিকসভাই অভিযোগ জানিয়েছে, দিল্লির অধিকাংশ সীমানা বন্ধ থাকার ফলে পণ্য পরিবহণের খরচ ও সময় বেশি লাগছে। আজ অ্যাসোচ্যামের বার্ষিক সভাতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ছয় মাস আগে যে কৃষি সংস্কার শুরু হয়েছিল, চাষিরা তার সুফল পেতে শুরু করেছেন।’’
কৃষিমন্ত্রী দু’দিন আগে কৃষি সংস্কারের গুণাগুণ নিয়ে চাষিদের খোলা চিঠি লিখেছিলেন। সরকার একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী এ দিন ফের সেই চিঠি ও পুস্তিকা সকলকে পড়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলি আঙুল তুলেছে আদানি গোষ্ঠীর বিজ্ঞাপনের দিকে। অম্বানী-আদানি গোষ্ঠীর ফায়দার জন্যই তিন কৃষি আইন এসেছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল কৃষক সংগঠনগুলির। আদানি গোষ্ঠী আগে থেকেই কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা খুলে, ফসল মজুতের পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলেছে বলেও পঞ্জাব কংগ্রেসের সাংসদরা অভিযোগ তুলেছেন। এ বার আদানি গোষ্ঠী নিজেই বিজ্ঞাপন নিয়ে এই ‘অপপ্রচার’-এর বিরুদ্ধে কৃষি আইনের গুণাগুণ ব্যাখ্যা করেছে। কৃষক সভার নেতা কে কৃষ্ণপ্রসাদ বলেন, ‘‘এ থেকেই স্পষ্ট, আইনে কাদের ফায়দা হচ্ছে।’’
কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, মোদী সরকার এক দিকে আন্দোলন তুলতে কৃষি আইনে সংশোধন করতে চাইছে। অন্য দিকে আন্দোলন ভাঙতে পঞ্জাবের মাণ্ডির কমিশন এজেন্টদের আয়কর দফতরের নোটিস পাঠাতে শুরু করেছে। পঞ্জাবের এই আরথিয়া বা কমিশন এজেন্টরাই মাণ্ডিতে কৃষকদের থেকে ফসল কেনেন। কৃষি আইনে সংস্কার করে বিজেপি এই মধ্যস্বত্বভোগীদের বিদায় করার কথা বলছে। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এঁরাই পিছন থেকে আন্দোলনে মদত দিচ্ছেন। কিন্তু কৃষকদের বক্তব্য, এজেন্টরা তাঁদের মতোই সাধারণ মানুষ। কৃষি আইন এলে তাঁরা রোজগার হারাবেন। গত কয়েক দিনে পঞ্জাবে এক ডজন এজেন্টকে আয়কর নোটিস পাঠানো হয়েছে বা আয়কর দফতর হানা দিয়েছে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহের অভিযোগ, ‘‘সরকার আয়কর নোটিসের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন দমাতে চাইছে।”