গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা যে কমেনি, তা দেখাল সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) রিপোর্ট। ধর্ষণ থেকে অপহরণ, অ্যাসিড হামলা থেকে গার্হস্থ্য হিংসা— মহিলাদের বিরুদ্ধে সব ধরণের অপরাধই ঊর্ধ্বমুখী। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-র তুলানায় ২০১৯-এ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে ৭.৩ শতাংশ। পাশাপাশি শিশুদের উপরও অত্যাচারের ঘটনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ।
এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯-এ মোট চার লক্ষ পাঁচ হাজার ৮৬১টি অপরাধের শিকার হয়েছেন মহিলারা। ২০১৮-তে যা ছিল ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৩৬। ২০১৭-তে ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮৪৯। ২০১৯ জুড়ে প্রতি এক লক্ষ মহিলার মধ্যে ৬২.৪ জন কোনও না কোনও ভাবে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। ২০১৮-তে তা ছিল ৫৮.৮। নারীর উপর অত্যাচারের ঘটনায় শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। দেশের মোট অপরাধের ১৪.৭ শতাংশই ঘটেছে যোগীরাজ্যে। এর পর রাজস্থান (১০.২ শতাংশ) ও মহারাষ্ট্র (৯.২ শতাংশ)।
দেশের যত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই মহিলারা নির্যাতিত হয়েছেন তাঁদের স্বামী বা অন্য আত্মীয়দের দ্বারা। স্বামী বা নিকট আত্মীয়দের হাতে নির্যাতনের ঘটনা এক লক্ষ ২১ হাজারেরও বেশি। মহিলাদের উপর সংগঠিত মোট অপরাধের ২১.৮ শতাংশ শ্লীলতাহানি বা যৌন হেনস্থার। এনসিআরবি-র তথ্য বলছে মেয়েদের উপর মোট অপরাধের ১৭.৯ শতাংশ অপরহণ সংক্রান্ত ও ধর্ষণের ঘটনা ৭.৯ শতাংশ।
বিভিন্ন ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে প্রায়শই। সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে লেখালিখিও হয় বিস্তর। কিন্তু এই কার্যকলাপ রুখতে পারেননি ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনা। ২০১৭-তে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৩২ হাজার ৫৫৯টি। ২০১৮-তে তা ছিল ৩৩ হাজার ৩৫৬। ২০১৯-এ সেই সংখ্যাটা ৩২ হাজার ৩৩। অর্থাৎ ২০১৯ জুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন গড়ে ৮৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৯-এ প্রায় পাঁচ হাজার জন নাবালিকা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় উপরের দিকে রয়েছে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের নাম। এ ব্যাপারে মহারাষ্ট্র, কেরলে, হরিয়ানা, অসম, ঝাড়খণ্ডও রয়েছে তালিকার উপরে। ধর্ষণ বা গণধর্ষণ করে খুনের পরিসংখ্যানও তুলে ধরছে দেশে নারী নির্যাতনের করুণ চিত্র।
পাশাপাশি পণের জন্য গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা ২০১৮-র থেকে বেড়েছে ২০১৯-এ। পণের জন্য অত্যাচারিত হয়ে সবথেকে বেশি মহিলা মারা গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশে। তার পরই রয়েছে বিহার। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশেও পণের জন্য শ্বশুরালয়ে অত্যাচারিত হয়েছেন গৃহবধূরা। পাশাপাশি যৌনপেশায় নামানোর জন্য মহিলা পাচারের ঘটনাও অহরহ ঘটে চলেছে দেশে।
মহিলাদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুরক্ষিত নয় শিশুরাও। ২০১৯-এ এক লক্ষ ৪৮ হাজার ১৮৫টি অপরাধের শিকার দেশের শিশুরা। ২০১৮-র তুলনায় যা সাড়ে চার শতাংশ বেশি। শিশু বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের ৪৬ শতাংশই অপহরণ সংক্রান্ত। শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা মোট অপরাধের ৩৫.৩ শতাংশ। দেশের প্রতি এক লক্ষ শিশুর মধ্যে ৩৩.২ জনই অত্যাচারের শিকার। ২০১৮-তে সংখ্যাটা ছিল ৩১.৮ ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে কাজ করে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট তৈরি করে তারা। দেশের বুকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দেখিয়ে দেয় এই রিপোর্টে। কিন্তু এই রিপোর্ট দেশের নারী ও শিশু নির্যাতনের সম্পূর্ণ চিত্র গড়ে ফুটিয়ে তোলে না। কারণ, এই রিপোর্ট তৈরি হয় দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোক লজ্জা বা সামাজিক মানহানির ভয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মহিলারা নিজের নির্যাতনের কথা গোপন করে যান। অনেক ক্ষেত্রেই নিকট আত্মীয়দের লালসার শিকার হন মেয়েরা। সে ক্ষেত্রেও পরিবারের লোকজন চেপে যান সেই ঘটনা। তাই সব ঘটনার মামলা দায়েরই হয় না। তাই ওই সব ঘটনা সামনে এলে পরিস্থিতিটা আরও করুণ হত বলেই মত তাঁদের।
আরও পড়ুন: ফের হাথরস, এবার দলিত মহিলাকে অপহরণ গাড়ি চালকের
এ বছর পশ্চিমবঙ্গ সংঘটিত অপরাধের ঘটনার তথ্য দেয়নি কেন্দ্রকে। এনসিআরবি-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বিষয়টি। সেখানে জানানো হয়েছে, জাতীয় ক্ষেত্রের পরিসংখ্যান নির্ণয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৮-র তথ্য।
আরও পড়ুন: ‘স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে অন্যায় করিনি’, দাবি আইপিএস অফিসারের