লক্ষদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়সল। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের পরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গোটা বিরোধী শিবির এককাট্টা। লোকসভার স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার তোড়জোড় চলছে। এই চাপের মুখে আজ লোকসভার সচিবালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে লক্ষদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়সলকে সাংসদ পদে পুনর্বহাল করল।
রাহুলের মতো ফয়সলেরও কারাদণ্ড হওয়ায় তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কেরল হাই কোর্ট তাঁর সাজায় স্থগিতাদেশ দিলেও গত দু’মাসে তাঁকে লোকসভার সাংসদ পদে পুনর্বহাল করা হয়নি। এর বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। আজ শীর্ষ আদালতে শুনানির আগেই সাতসকালে তড়িঘড়ি লোকসভার সচিবালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ফয়সলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রাহুলকে মোদী পদবি নিয়ে মানহানির মামলায় যে দোষী সাব্যস্ত করেছে, তাতে দায়রা আদালত স্থগিতাদেশ দিলেই রাহুলেরও সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এনসিপি সাংসদের মতো দেরি করা হবে না। কারণ রাহুলের সাংসদ পদ খারিজকে অস্ত্র করে কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির মোদী সরকারকেই নিশানা করছে। কংগ্রেস গোটা এপ্রিল জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে। বিরোধীদেরও এককাট্টা করে ফেলেছে। রাহুলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিলে তাতে জল ঢেলে দেওয়া যাবে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ নির্বাচন কমিশন কর্নাটকের ভোট ঘোষণার সঙ্গে জালন্ধর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘোষণা করলেও রাহুলের ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘোষণা করেনি। কংগ্রেস নেতারা প্রথমে তেমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘‘কোনও লোকসভা আসন খালি হলে উপনির্বাচনের জন্য ছ’মাস সময় থাকে। ওয়েনাড়ের ক্ষেত্রে নিম্ন আদালত ৩০ দিনের সময় দিয়েছে। তাই আমরা অপেক্ষা করব।’’
রাহুলের তরফে এখনও সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে মামলা করা হয়নি। সুরাতের কোর্ট রাহুলকে দু’বছরের কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল। কারাদণ্ডে ৩০ দিনের স্থগিতাদেশ দিয়ে উচ্চ আদালতে আর্জির সময়ও দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর খসড়া প্রায় তৈরি। আগামী দু’এক দিনে বা পরের সপ্তাহের গোড়ায় দায়রা আদালতে আর্জি জানানো হবে। রাহুল আজ সংসদে কংগ্রেসের সংসদীয় দলের দফতরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে যোগ দেননি।
রাহুলকে স্রেফ মানহানির মামলায় দু’বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও লক্ষদ্বীপের এনসিপি সাংসদকে নিম্ন আদালত খুনের চেষ্টার অভিযোগে ১০ বছরের জেলের সাজা শুনিয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি ওই সাজা ঘোষণার পরেই ১৩ জানুয়ারি তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়। কেরল হাই কোর্ট গত ২৫ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ দিলেও এত দিন তিনি সাংসদ পদ ফিরে পাননি। এ নিয়ে এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে দরবার করেছিলেন। ফয়সলের বক্তব্য, যে দ্রুত গতিতে তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, একই গতিতে তা ফেরানো উচিত ছিল। ফয়সলের আশা, তাঁর মতো রাহুলেরও সাংসদ পদ ফেরানো হবে।