শরদ পওয়ার, সনিয়া গাঁধী ও উদ্ধব ঠাকরে
মুখ্যমন্ত্রিত্বের ‘ভাগ’ না দেওয়ায় মহারাষ্ট্রে বিজেপির হাত ছেড়েছে শিবসেনা। অথচ উদ্ধব ঠাকরের দলকে সমর্থনের ‘পুরস্কার’ হিসাবে সেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের ‘ভাগ’-ই চেয়ে বসেছিল এনসিপি। আর তাই নাকি জোট সরকার গড়তে পারেনি শিবসেনা-এনসিপি। এমনই দাবি করছে দুই দলের বিভিন্ন সূত্র।
বিজেপির কাছে শিবসেনার দাবি ছিল, ‘পূর্ব শর্ত’ মতো মহারাষ্ট্রের মুখমন্ত্রীর পদের ভাগ দিতে হবে তাদেরও। কিন্তু শরিকের সেই দাবি মানেননি দেবেন্দ্র ফডণবীসরা। আর সেই টানাপড়েন নিয়েই ক্রমশ চওড়া হয়েছিল বিজেপি ও শিবসেনার সম্পর্কের ফাটল। মহারাষ্ট্রে ভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণের পথও প্রায় খুলে গিয়েছিল। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে ধাক্কা খেতে হয় শিবসেনাকে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, শিবসেনাকে সমর্থনের বিনিময়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রিত্ব চেয়েছিলেন এনসিপি প্রধান পওয়ার। তাঁর শিবসেনাকে দেওয়া শর্তের মধ্যে ছিল, ৫০-৫০ পদ্ধতিতে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিও। আর এর ফলেই না কি জট পেকেছে শিবসেনা-এনসিপি জোটে।
বৃহত্তম দল হিসাবে সরকার গঠনে ডাক পেলেও সরকার গঠন করবে না বলে জানিয়ে দেয় বিজেপি। সংখ্যার অভাবে সরকার গড়তে পারবে না বলে রাজ্যপালকে প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। মরাঠা ভূমে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায়, এমন নাটকীয় ভাবে পট পরিবর্তনের কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে উঠে আসছে নানা কারণ। এক সময় মনে হচ্ছিল, বিজেপিকে ছাড়াই সরকার গড়ার প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে শিবসেনা। এনসিপি ও কংগ্রেসের সংখ্যা যোগ করে মোট ১৫৪ বিধায়কের সমর্থন পেয়েই গিয়েছেন বলে ধরে নিয়েছিলেন উদ্ধব ঠাকরেরা, যা ম্যাজিক ফিগার ১৪৫-এর থেকে নয় বেশি। কিন্তু, সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, শেষ মুহূর্তে সনিয়া গাঁধী এবং শরদ পওয়ারের মধ্যে টেলিফোনে কথোপকথনই বদলে দেয় মহারাষ্ট্রের ছবিটা।
আরও পড়ুন: সরকার গড়ার পথ খুলে বহাল বিধানসভা, মহারাষ্ট্রে ৩৫৬, কোর্টে শিবসেনা
সূত্রের খবর, সোমবার, বিকেল পাঁচটা নাগাদ, সনিয়া গাঁধীকে ফোন করে তাঁদের সমর্থন করার প্রস্তাব দেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। দলীয় স্তরে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে উদ্ধবকে জানান সনিয়াও। কিন্তু, সেই কথোপকথনের ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই সনিয়াকে ফোন করেন শরদ পওয়ার। সূত্র বলছে, সনিয়াকে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে নিরস্ত করেন শরদ।
সোমবার, মহারাষ্ট্র নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে কংগ্রেস। সূত্র জানাচ্ছে, বৈঠকে শিবসেনার সঙ্গে জোটে যেতে প্রবল ভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। তাঁর মত ছিল, হিন্দুত্ববাদী শিবসেনার সঙ্গে জোটে গেলে তা দলের ভাবমূর্তিতে খারাপ প্রভাব ফেলবে। তাঁর মতকে সমর্থন জানান কংগ্রেস নেতা একে অ্যান্টনি, কেসি বেণুগোপালও। এমনকি সনিয়ার পাশে দাঁড়ান মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা মুকুল ওয়াসনিক। সূত্র আরও জানাচ্ছে, বিজেপিকে ‘ধাক্কা’ দিতে শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়ে মহারাষ্ট্রে সরকারে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন অশোক চহ্বণ, পৃথ্বীরাজ চহ্বণ, বালাসাহেব থোরাট বা সুশীলকুমার শিন্ডের মতো নেতারা।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি শাসনের বৈধতা নিয়ে মতভেদ সংবিধান বিশেষজ্ঞদের
এর মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন শরদ পওয়ার। বলেন, “আমাদের কোনও তাড়াহুড়ো নেই, কারণ রাজ্যপাল আমাদের আলোচনা চালানো এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছেন।’’ তাড়াহুড়ো করার পক্ষে সায় দিচ্ছেন না কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলও। তাঁর বক্তব্য, “প্রথমে আমরা নিজেরা আলোচনা করেই নিই। যখন বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হবে তার পর আমরা শিবসেনার সঙ্গে কথা বলব।’’