ইয়াসমিন বেশ জোর গলায় জানিয়েছেন, নবাব তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর ভাই সমীরকে নিজের দায়িত্ব পালনে বিরত রাখতেই এমনটা করেছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকের রসদ কি ফুরিয়ে এসেছে?
গত কয়েক দিনে এনসিবি কর্তা এবং মুম্বইয়ের মাদক মামলার তদন্তকারী সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি। বুধবার পর্যন্ত রোজ সকালে যুদ্ধক্ষেত্রে একটি করে বোমা ফেলেছেন। সেই বিস্ফোরণের আওয়াজও শোনা গিয়েছে দিনভর। বলতে গেলে মাদক মামলার আলোকবৃত্ত আরিয়ান খানের উপর থেকে এক রকম নিজের দিকেই টেনে নিয়েছিলেন নবাব। অথচ সেই নবাবেরই টুইটার অ্যাকাউন্ট বৃহস্পতিবার স্তব্ধ। সমীরের বিরুদ্ধে নতুন কোনও ‘বোমা’ নেই সেখানে। নেই কোনও ছবি, নথি বা বিবৃতি যা এনসিবি কর্তা সমীরের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি অবশেষে হাল ছাড়লেন মহারাষ্ট্রের উন্নয়ন মন্ত্রী? জবাব পাওয়া গেল সমীরের পরিবারের কাছে। জানা গেল, হাল ছাড়েননি, স্রেফ যুদ্ধের অভিমুখ বদলেছেন। এনসিবি কর্তাকে ছেড়ে এ বার তাঁর লক্ষ্য সমীরের বোন ইয়াসমিন ওয়াংখেড়ে। বৃহস্পতিবার জাতীয় মহিলা কমিশনকে লেখা একটি চিঠিতে ইয়াসমিন জানিয়েছেন, মহরাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব তাঁকে উত্যক্ত করছেন। তাঁর ব্যক্তিগত কিছু ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন।
এর আগে সমীরের বিরুদ্ধে যখন পরিচয় গোপন করার অভিযোগ এনেছিলেন নবাব, তখন ইয়াসমিনের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তবে কমিশনকে লেখা চিঠিতে ইয়াসমিন জানিয়েছেন, মন্ত্রী শুধু তাঁর নাম উল্লেখ করেই থেমে যাননি। ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে পুরনো দিনের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি সংগ্রহ করেছেন। সংবাদ মাধ্যমে সেই সব ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার ভয়ও দেখিয়েছেন। ফলে নবাব বনাম সমীর লড়াইয়ে সমীরের সমর্থকরা প্রশ্ন তুলল এ বার কি তবে সমীরের বিরুদ্ধে রসদে টান পড়ল নবাবের? তাই কি তিনি এনসিবি কর্তাকে ছেড়ে তাঁর পরিবারকে ‘টার্গেট’ করছেন?
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অবশ্য এই সব বিতর্ক নিয়ে একটিও কথা বলেননি নবাব। রাত ১১টা ৫১ মিনিটে শুভরাত্রি লিখেছিলেন। তার পর থেকে ব্যক্তিগত কোনও টুইট করেননি। পরিবর্তে আগের দিন সমীরের বিরুদ্ধে তাঁর আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে যে সব খবর প্রকাশিত হয়েছিল, সেই খবরগুলি শেয়ার করেছেন। অন্য দিকে, ইয়াসমিন বেশ জোর গলায় জানিয়েছেন, নবাব তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। কমিশনকে এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।
কমিশনকে লেখা চিঠির বয়ানে ইয়াসমিন লিখেছেন, ‘সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার সদস্য নবাব মালিক আমার বিরুদ্ধে এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক অভিযোগ এনেছেন।’ পুরোটাই তাঁর ভাই সমীরকে তাঁর দায়িত্ব পালনে বিরত রাখতেই এমনটা করেছেন বলে অভিযোগ জানিয়ে ইয়াসমিন চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘এ বিষয়ে উনি এতটাই বেপরোয়া যে নেটমাধ্যমে আমার উপর নজরদারি চালাতেও ওঁর বিবেকে বাধেনি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকে আমার ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে তা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।’’ এই মর্মে নবাবের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত পরিসরের হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন ইয়াসমিন। তাঁর অভিযোগ, মাদক মামলার তদন্তে বাধা দিতেই এ ভাবে তাঁর ভাইয়ের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন নবাব।
ইয়াসমিনের এই অভিযোগের পর কমিশন অভিযোগ দায়ের করেছে কি না তা জানা যায়নি। তবে সমীরের সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছেন, মাদক মামলার তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে হয়তো কারও প্রিয় হতে চাইছেন নবাব। কিন্তু অবশেষে কি সমীরের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়লেন নবাব?
প্রসঙ্গত এর আগে সমীরের বিরুদ্ধে চাকরির জন্য ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল, পরিচয় গোপন, তদন্তে অনিয়ম-সহ একাধিক অভিযোগ এনেছিলেন নবাব।