গত কাল ছুটির দিন থাকায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ‘খুব খুব খারাপ’ থেকে আজ এক ধাপ উপরে উঠল।
গত কাল ছুটির দিন থাকায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ‘খুব খুব খারাপ’ থেকে আজ এক ধাপ উপরে উঠল। আজ দিল্লির বায়ুমানের সূচক ছিল ৩১৮-এর কাছাকাছি, যা ‘খুব খারাপ’। ছুটি থাকলে দূষণ কম হচ্ছে, ওই যুক্তিতে আজ দিল্লি-সহ জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে (এনসিআর) অন্তত ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় দিল্লি সরকার। এনসিআর-এর দূষণ যে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে, পর্যবেক্ষণে তা স্বীকার করে নিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রয়োজনে এনসিআর এলাকায় সম্পূর্ণ লকডাউন করা যায় কি না তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে ভেবে দেখতে বলেছে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ। ফি বারের মতো আজও দিল্লির দূষণের জন্য প্রতিবেশী রাজ্যের কৃষকদের ফসলের গোড়া পোড়ানোকে কেজরীবাল সরকাল দায়ী করলে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা হলফনামায় জানায়, সারা বছরে দিল্লির কেবল ১০ শতাংশ বায়ু দূষণের কারণ হল ফসলের গোড়া পোড়ানো ধোঁয়া। মূল কারণ কলকারাখানার বর্জ্য ও গ্যাস, যানবাহনের ধোঁয়া এবং রাস্তার ধুলো। কেন্দ্রের ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ দিল্লি সরকারের সমালোচনা করে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, ‘ঝোলা থেকে শেষ পর্যন্ত বেড়াল বেরিয়েই পড়ল!’ সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, অন্য দূষণের কারণগুলি কেন রুখতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার!
দিল্লি দূষণের কারণ ও তার সমাধানের রাস্তা খতিয়ে দেখতে আগামিকাল বৈঠকে বসছে জাতীয় টাস্ক ফোর্স। উপস্থিত থাকবেন দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের মুখ্যসচিবেরা। আজ শীর্ষ আদালতকে দিল্লি সরকার জানিয়েছে, পরিবেশে যানবাহনের কারণে হওয়া বায়ু দূষণ কমাতে আগামী এক সপ্তাহ দিল্লিতে লকডাউনের করার পক্ষপাতী সরকার। কিন্তু গুরুগ্রাম, নয়ডা বা গাজিয়াবাদের মতো এনসিআর এলাকাকে ওই লকডাউনের আওতায় নিয়ে না এলে লাভ হবে না। দিল্লি সরকারের ওই আবেদনের ভিত্তিতে শুনানিতে উপস্থিত তিন সদস্যের বেঞ্চের সদস্য প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা বলেন, “আমরা এমন কোনও আদেশ জারি করছি না। আপনারা জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করে কী ভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সেই রূপরেখা ঠিক করুন।” সূত্রের মতে, জাতীয় টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই আজ জানিয়েছেন, “আমরা লকডাউনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।” তবে আজ সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে আগামী এক সপ্তাহ কৃষকেরা যাতে খেতের আগাছা না পোড়ায়, সে বিষয়টি রাজ্যগুলিকে নিশ্চিত করার উপরে জোর দিয়েছে।
আজ শীর্ষ আদালতের আক্রমণের মুখে পড়ে দুষণের দায় বিজেপি শাসিত পুরনিগমের দিকে ঠেলে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিল দিল্লি সরকার। প্রধান বিচারপতি পাল্টা প্রশ্নে জানতে চান, “আপনারা কি পুর নিগমের ঘাড়ে দায় ঠেলে দিতে চাইছেন?” এখানেই না থেমে আর এক বিচারপতি সূর্যকান্ত স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেজরীবাল সরকার এ ধরনের ছেঁদো যুক্তি দিলে তারা যে রাজস্ব সংগ্রহ করছেন এবং বিজ্ঞাপন খাতে যে অর্থ খরচ করা হচ্ছে তার সবিস্তারে অডিট করানো হবে।
রাজনৈতিক চাপানউতোর, আদালতের হস্তক্ষেপের মধ্যে আজ সন্ধ্যায় এক প্রস্থ খারাপ খবর দিয়েছে সরকারের বায়ু মানক পূর্বাভাস দফতর। তারা জানিয়েছে, এনসিআর-এ বায়ুপ্রবাহ একেবারে গতি হারানোয় আগামিকাল থেকে দিল্লি-সংলগ্ন এলাকার দূষণের চাদর আরও গাঢ় হবে। আরও অবনতি হবে বায়ুর মানের। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিতে যেমন নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ বন্ধ, সরকারি স্কুল ও দফতরে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতি চালু করেছে, তেমনই দিল্লি সংলগ্ন হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশকেও একই পথে হাঁটার সুপারিশ করেছে ‘কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট’।