‘ইনস্টিটিউট ফর কম্পিটিটিভনেস’-এর তৈরি রিপোর্ট পেশ করল প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ। ছবি সংগৃহীত।
মোদী সরকারের আমলে চাকরির অভাব ও ধনী-গরিবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসাম্য নিয়ে বিরোধীরা নিয়মিত প্রশ্ন তুলছেন। আজ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের তত্ত্বাবধানে তৈরি রিপোর্ট বলল, চাকরির সুযোগ তৈরি ও ধনী-গরিবের মধ্যে অসাম্য কমানোকেই পাখির চোখ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছর পূর্তিতে ১৫ অগস্ট লাল কেল্লা থেকে নতুন লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। তা হল, স্বাধীনতার শতবর্ষ, ২০৪৭-এ ভারতকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। আজ তারই রূপরেখা প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ। ‘ইন্ডিয়া@১০০’ নামে ‘ইনস্টিটিউট ফর কম্পিটিটিভনেস’-এর তৈরি সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতকে যদি সত্যিই ২০৪৭-এর মধ্যে অন্তত মাঝারি আয়ের রাষ্ট্রের তালিকায় নাম তুলতে হয়, তা হলে দু’টি দিকেনজর দিতে হবে। এক, আর্থিক বৃদ্ধির সুফল যাতে সমস্ত ক্ষেত্রে ও সব মানুষ সমান ভাবে পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। দুই, আরও চাকরি তৈরির দিকে চোখ রেখে নীতি তৈরি করতে হবে।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস, এপ্রিল-জুনের আর্থিক বৃদ্ধির হার বুধবার প্রকাশিত হবে। অর্থ মন্ত্রকের অনুমান, বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ ছাপিয়ে যাবে। স্বাভাবিক নিয়মেই মোদী সরকার তথা বিজেপি তা নিয়ে ঢাক পেটাতে নামবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কোভিড ও লকডাউনের ধাক্কায় ২০২০-২১-এর এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র ২৪.১ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। তার তুলনায় গত বছর, ২০২১-২২-এর এপ্রিল-জুনে ২০.১ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেলেও, বাস্তবে জিডিপি কোনও মতে আগের বছরের জায়গায় পৌঁছেছিল। এ বছর এপ্রিল-জুনে জিডিপি গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও বাস্তবে তিন বছর আগে, ২০১৯-২০-র তুলনায় জিডিপি-র মাত্র ২ শতাংশ বৃদ্ধি হবে।
আজকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই আর্থিক বৃদ্ধির সুফলও দেশের সব অংশে সমান ভাবে পৌঁছচ্ছে না। মানুষের জীবনযাত্রার মানে আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। আর প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তরুণ চাকরির সন্ধানে বাজারে নামলেও ভারত সেই অনুযায়ী চাকরি তৈরি করতে পারছে না। বিশেষ করে মহিলা ও স্বল্প প্রশিক্ষিতদের জন্য চাকরি তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে। এই অসাম্য ও কাজের অভাব নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ টুইট করে বলেছেন, ‘‘দেশে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ জন দিনমজুর আত্মহত্যা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর মিত্রদের সম্পদ প্রতি ঘণ্টায় ৮৫ কোটি টাকা করে বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র কাজ হল, গরিবদের লুঠ করে তাঁর বন্ধুদের আরও বড়লোক করা।’’
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায় আজ দাবি করেছেন, প্রতি বছর গড়ে ৭ থেকে ৭.৫% আর্থিক বৃদ্ধি হলে ভারতের জিডিপি ২০৪৭-এ ২০ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২৫ বছর পরে ভারতে মাথা পিছু আয় ১০ হাজার ডলারে পৌঁছবে। এখন ভারতের জিডিপি-র পরিমাণ ২.৭ লক্ষ কোটি ডলার। তাঁর দাবি, মানব উন্নয়ন সূচকেও ভারত ২০৪৭-এ প্রথম সারিতে থাকবে।
বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার ৭৫-তম বছর, ২০২২-ও সকলের জন্য পাকা বাড়ি, চাষিদের দ্বিগুণ আয়, দারিদ্র, দূষণ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস-মুক্ত ভারতের লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। তার কোনও লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। ২০২২-এর লক্ষ্য পূরণের জন্যও নীতি আয়োগ ‘ইন্ডিয়া@৭৫’ নামের রিপোর্ট তৈরি করেছিল। এখন যেমন ‘ইন্ডিয়া@১০০’ নামেক রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, নীতি আয়োগের সেই রিপোর্ট এখন কোথায়?