Narendra Modi

নেতাজি কমিটির মাথায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেল, শাহকে সরিয়ে মোদী নিজেই এই কমিটির চেয়ারম্যানের পদে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের মুখে অধুনাবিস্মৃত কবি মনোমোহন বসুর নামোল্লেখ করতেও পিছপা হননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবীন্দ্রনাথ অথবা বঙ্কিমচন্দ্রের মতো মনীষীরা তো ইদানীং অহরহ উঠে আসছেন তাঁর বাংলা সংক্রান্ত রাজনৈতিক ভাষ্যে। তাই নেতাজির আসন্ন ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন ঘিরে যে দীর্ঘমেয়াদি চিত্রনাট্য তৈরি হবে, তা জানাই ছিল রাজনৈতিক শিবিরের। নেতাজির জন্মদিন পালনে গত মাসের ২১ তারিখ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেছিল সংস্কৃতি মন্ত্রক। কিন্তু আজ সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেল, শাহকে সরিয়ে মোদী নিজেই এই কমিটির চেয়ারম্যানের পদে!

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কেন এই শেষ মুহূর্তের বদল? বাংলার মানুষের মন জয়ে শাহের উপর আস্থায় কি ঘাটতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর? নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াইয়ে সরাসরি নিজেকে সামনে নিয়ে আসতে চাইছেন তিনি? ঠিক যেমনটা করেছেন সম্প্রতি উত্তর ভারতের বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা ভোটে। বিরোধীদের প্রশ্ন, তা-ই যদি হবে, তা হলে মাত্র ১৮ দিন আগে শাহকে নেতাজি কমিটির চেয়ারম্যান করার কথা বলা হল কেন? বিজেপির পক্ষ থেকে এর স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে সরকারি সূত্রের দাবি, নেতাজির মর্যাদার কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী নিজে এই কমিটির প্রধান হয়েছেন।

মোদীকে নিয়ে কমিটির সদস্য সংখ্যা ৮৫। ওড়িশার কটকে জন্ম হয়েছিল সুভাষচন্দ্রের। সেই হিসেবে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক রয়েছেন কমিটিতে। রাখা হয়েছে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও। তবে প্রত্যাশিত ভাবেই কমিটির সদস্যদের বড় অংশই বাঙালি। রয়েছেন বলিউডের দুই বাঙালি তারকা মিঠুন চক্রবর্তী এবং কাজল। সঙ্গীতকার এ আর রহমান, ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যকে রাখা হয়েছে কমিটিতে। নিয়ম অনুযায়ী কমিটিতে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী।

Advertisement

কমিটিতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও বাংলার দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী-সহ ৭ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। জায়গা পেয়েছেন দিলীপ ঘোষ-সহ বাংলার বিজেপি সাংসদরা। সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলও রয়েছেন কমিটিতে। আছেন শুভেন্দু অধিকারী, সৌমিত্র খান, খগেন মুর্মুরা। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে বিধায়ক পদ ছেড়ে দিলেও বিজ্ঞপ্তিতে শুভেন্দুকে বিধায়ক হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে।

অনেকের মতে, তালিকা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, আসন্ন বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই সদস্য বাছা হয়েছে। পাশাপাশি, কমিটির সদস্যদের অনেকের নেতাজিকে ঘিরে আবেগ বা ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ নিয়েও প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নেতাজি চিরকাল সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়াই

করেছেন। তাঁর গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজ সাম্প্রদায়িক এবং ভাষাগত সংহতির আদর্শ উদাহরণ। এখন যারা দেশে শাসন চালাচ্ছে, তাদের নীতিই হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। সুতরাং, মোদী সরকারের কোনও অধিকারই নেই নেতাজির নাম করে তাঁকে স্মরণ করার জন্য কোনও কমিটি গড়ার।’’

কমিটিতে চন্দ্রকুমার বসু-সহ নেতাজির পরিবারের কয়েক জন সদস্য এবং আইএনএ বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব থাকলেও নেই নেতাজি রিসার্চ বুরোর কোনও সদস্য। নেতাজি পরিবারের সদস্য, ইতিহাসবিদ এবং তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সুগত বসু অবশ্য এই বাদ পড়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement