বন্দে ভারত অন্তত সব রাজ্যকে ছুঁয়ে চলুক, এমনটাই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে। ফাইল চিত্র।
কমবেশি ন’মাস আগে, গত স্বাধীনতা দিবসে সারা দেশে এক বছরে অর্থাৎ আগামী ১৫ অগস্টের মধ্যে ৭৫টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু করার ব্যাপারে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নানা কারণে উৎপাদনে দেরি হওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এখন কার্যত অসম্ভব। এই অবস্থায় আগামী জুনের মধ্যে বন্দে ভারত অন্তত সব রাজ্যকে ছুঁয়ে চলুক, এমনটাই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেই দিল্লি থেকে ভিডিয়োর মাধ্যমে দেহরাদূন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গোটা বিশ্ব আজ ভারতে এসে ভারতকে দেখতে চাইছে। ভারতকে বুঝতে তার সুঘ্রাণ নিতে চাইছে।” উত্তরাখণ্ডের এটি প্রথম বন্দে ভারত। এই ট্রেনে দিল্লি থেকে দেহরাদূন যেতে সময় লাগবে চার ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। নিয়মিত যাত্রা শুরু করার কথা ২৯ মে। সেই দিনেই নিউ জলপাইগুড়ি ও গুয়াহাটির মধ্যে একটি নতুন বন্দে ভারত নিয়মিত যাত্রা শুরু করবে বলে রেল সূত্রের খবর। ট্রেনটির দ্বিতীয় দিনের মহড়া-দৌড় হয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নীলাঞ্জনা দেব বলেন, ‘‘মহড়া-দৌড় সফল ভাবে হচ্ছে। নিয়মিত ভাবে চলার আগে স্টপেজের চূড়ান্ত তালিকা জানানো হবে।’’ নিউ কোচবিহারে ট্রেনটির স্টপ না-থাকায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
সামনের বছর লোকসভার ভোট। এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য রুটগুলিতে ট্রেন চালু করার লক্ষ্যমাত্রা যথাসম্ভব পূরণে আগামী কয়েক মাস আর ১৬ কোচের ট্রেন তৈরি না-করে চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিকে আট কোচের এক্সপ্রেস তৈরি করতে বলা হয়েছে বলে রেল সূত্রের খবর। নিউ জলপাইগুড়ি-গুয়াহাটি বন্দে ভারতের রেকটি আট কোচেরই। রাঁচী-পটনা, হাওড়া-রাঁচী, সেকেন্দরাবাদ-যশোবন্তপুর রুটে যে-সব বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু করার কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানেও আট কোচের এই পবনগতির ট্রেন ছুটবে বলে খবর।
প্রধানমন্ত্রী গত স্বাধীনতা দিবসে দেশে এক বছরে ৭৫টি বন্দে ভারত চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও এ-পর্যন্ত মাত্র ১৫টি বন্দে ভারত চালু হয়েছে। সারা দেশকে জুড়ে ফেলার লক্ষ্য পূরণ হলে ফের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৬ কোচের ট্রেন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। টেন্ডার বা দরপত্র এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পরে দ্বিতীয় পর্বের বন্দে ভারতের নমুনা রেকের বিভিন্ন পরীক্ষা ও মহড়া সম্পূর্ণ হতে গত বছর অগস্ট গড়িয়ে গিয়েছিল। তার পরে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গেলে এক সপ্তাহের কম সময়ে কার্যত গড়ে ৩-৪ দিনে একটি ট্রেন তৈরি করতে হত। কিন্তু চেন্নাইয়ের কারখানায় উপযুক্ত পরিমাণে কাঁচামাল, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তো আছেই। তার পাশাপাশি রায়বরেলীর মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরি এবং মহারাষ্ট্রের রেল কোচ ফ্যাক্টরিতে এখনও উৎপাদন শুরুই করা যায়নি। তবে রেলমন্ত্রীর দাবি, খুব তাড়াতাড়ি সেখানে উৎপাদন শুরু হবে। রেলকর্তাদের দাবি, ‘জাতীয় উৎকর্ষের প্রতীক’ হয়ে ওঠা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস উৎপাদনের চাপটা একক ভাবে চেন্নাইয়ের আইসিএফ কারখানাকেই সামলাতে হচ্ছে। সব দিক বিচার করে তাই কিছুটা কাটছাঁট করে লক্ষ্য পূরণ করার চেষ্টা চলছে।
রেলের দাবি, নজরকাড়া গড়ন ছাড়াও গতি ও স্বাচ্ছন্দ্যের দৌলতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। গত ডিসেম্বরে চালু হওয়া হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত ১০০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ছুটছে। রেল জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ৭৬ বার যাতায়াতে ট্রেনটি ২৫ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা আয় করেছে। হাওড়া-পুরী পথে সদ্য যাত্রা শুরু করা বন্দে ভারতও সব আসনে ভর্তি যাত্রী নিয়ে ছুটবে অচিরেই।