প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।
ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ জোগানোকেই লকডাউনের গ্রাস থেকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু তাতে ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়বে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফসি-র কর্তারাও বৈঠকে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর অভিযোগ, ঋণখেলাপিদেের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নরেন্দ্র মোদীর অনিচ্ছার কারণেই উর্জিত পটেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ থেকে বিদায় নেন। মেয়াদ ফুরনোর আগেই ২০১৮-র ডিসেম্বরে গভর্নর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন উর্জিত। সম্প্রতি নিজের বইতে উর্জিত লিখেছেন, ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ চিহ্নিত করতে দেউলিয়া আইন শিথিল করা নিয়েই ২০১৮ সালে তাঁর সঙ্গে মোদী সরকারের মতান্তর হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ ছিল, ২০০০ কোটি বা তার বেশি ঋণ নিয়ে কোনও সংস্থা ধার শোধে এক দিনও দেরি করলে তাকে ঋণখেলাপি চিহ্নিত করে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া আইনে ব্যবস্থা নেবে। তাঁর বইয়ে উর্জিত বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে সরকারের আপত্তি ছিল।
উর্জিত সরাসরি নাম না-করলেও তাঁর অভিযোগের আঙুল যে পীযূষ গয়ালের দিকে, তা প্রায় সকলেই বুঝতে পারছেন। কারণ, ২০১৮-র মাঝামাঝি অরুণ জেটলির অসুস্থতার সময়ে গয়ালই বেশ কয়েক মাস অর্থ মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কড়াকড়ির বিরুদ্ধে মুখও খুলেছিলেন। উর্জিতের পরে শক্তিকান্ত দাস গভর্নর পদে আসেন, এবং ওই নিয়ম শিথিল করা হয়। উর্জিতের অভিযোগ নিয়ে অবশ্য গয়াল বা বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, কেউই মুখ খোলেননি।
বুধবার সন্ধ্যার বৈঠক প্রসঙ্গে আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, সেখানে আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে স্থায়িত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। ভবিষ্যতের রূপরেখাও আলোচনায় আসবে। মোদী সরকার আগেই স্পষ্ট করেছে, ভবিষ্যতে অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই বিলগ্নিকরণ করা হবে। বৈঠকে সে ব্যাপারে আলোচনা হবে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
এ দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ঋণ শোধ না-হওয়ার জেরে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ বাড়তে চলেছে। করোনা-আবহে শিল্পক্ষেত্রের দুরবস্থার প্রেক্ষিতেই তাঁর এমন আশঙ্কা। মোদী সরকার ব্যাঙ্কের মাধ্যমে যথেচ্ছ ঋণ বিলি করতে চাইলেও, ব্যাঙ্কগুলি ঝুঁকি নিতে চাইছে না। শক্তিকান্তের মতে, ব্যাঙ্কগুলিকে এই ঝুঁকি এড়ানোর মানসিকতা ছাড়তে হবে। করোনার থেকে আর্থিক সুরাহা দিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে ব্যাঙ্কগুলি ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখার সুবিধা দিচ্ছে। তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের দীপক পারেখ। তাঁর অভিযোগ, কিছু সংস্থা অনৈতিক ভাবে এই সুবিধা নেওয়ায় আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্র, বিশেষ করে এনবিএফসি-গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনার সময়ে দেউলিয়া প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েও আপত্তি উঠেছে। এর বিরুদ্ধে মামলায় আজ কেন্দ্রকে নোটিস জারি করেছে দিল্লি হাইকোর্ট।