নরেন্দ্র মোদী।— ছবি পিটিআই।
দু’হাজার টাকার নোট এমনিতেই বাজারে কমে আসছে। নতুন নোট ছাপানোও বন্ধ। ধীরে ধীরে দু’হাজারের নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রায়ই জল্পনা চলে। সেই জল্পনাই উস্কে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র জানালেন, ২০১৬-য় নোট বাতিলের প্রস্তুতির সময় দু’হাজারের নোট ছাপানোয় মোদীর সায় ছিল না। কিন্তু বড় অঙ্কের নোট দ্রুত ছাপাতে পারলে বাজারে নগদের জোগান বাড়ানো যাবে বলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে পরামর্শ তিনি মেনে নেন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে এই ‘অজানা কাহিনি’ শুনিয়ে নৃপেন্দ্র জানিয়েছেন, ‘‘মোদী এই সিদ্ধান্তের দায় পুরোপুরি নিজে নিয়েছেন। উপদেষ্টাদের উপরে কখনও দোষ চাপাননি।’’ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে কোনও নতুন দু’হাজারের নোট ছাপানো হয়নি। ২০১৮-র মার্চে বাজারে দু’হাজারের নোটের সংখ্যা ছিল ৩৩৬ কোটির বেশি। ২০২০-র মার্চে তা ২৭৩ লক্ষে নেমে এসেছে। নৃপেন্দ্রর বক্তব্য, ‘‘এখন এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী ২০০০ টাকার নোট ছাপানোয় নিরুৎসাহ দেখিয়ে আগের ভুল শোধরাচ্ছেন।’’
নৃপেন্দ্র ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছিলেন। নোট বাতিলের কাহিনির সঙ্গে তিনি একই নিঃশ্বাসে বলেছেন, ‘‘এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে, পুরোপুরি একমত না হলেও প্রতিষ্ঠানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাকিদের মত মেনে নিয়েছেন মোদী।’’
আরও পড়ুন: কৃষি-সংস্কারে আপত্তি, পদত্যাগ হরসিমরতের
নৃপেন্দ্রর এই মন্তব্য থেকে আর একটি প্রশ্নও অবশ্য উঠেছে— নরেন্দ্র মোদী কি তবে নোট বাতিলের ভাবনার সঙ্গেও একমত ছিলেন না বলে নৃপেন্দ্র ইঙ্গিত করতে চাইছেন? মোদী কি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুপারিশ মেনে চলছিলেন বলে নৃপেন্দ্র বোঝাতে চাইছেন?
বিরোধীরা দাবি করছেন, নোট বাতিল থেকেই যে অর্থনীতির অসুখ ধরেছে, সেটা এখন সরকার হাড়ে হাড়ে বুঝছে। তাই মোদীও ধীরে ধীরে নোট বাতিলের দায় অন্যের ঘাড়ে ঠেলতে চাইছেন। এর আগেও সরকারের তরফে বলার চেষ্টা হয়েছিল যে, মোদী একতরফা নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেননি। উর্জিত পটেলের জমানায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আজও নৃপেন্দ্রর কথার ব্যাখ্যা দিয়ে বিজেপি নেতাদের যুক্তি, নরেন্দ্র মোদী যে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, বাকিদের মতামত শোনেন, সেটাই নৃপেন্দ্র বোঝাতে চেয়েছেন।
এখন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা দু’হাজারের নোট নিয়ে সরকারের উৎসাহ হারিয়ে ফেলার কথা অস্বীকার করছেন না। তাঁদের মতে, কালো টাকা শেষ করতেই নোট বাতিল হয়েছিল। কিন্তু দু’হাজারের নোটে কালো টাকা মজুত করা আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৮-র এপ্রিলে বাজারে নগদের অভাব দেখা দেয়। দু’হাজারের নোট মজুত করে রাখাই তার প্রধান কারণ ছিল। এর পরেই দু’হাজারের নোট ছাপানো কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।