সিবিআই সদর দফতরের সামনে অগুস্তা চপার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ব্রিটিশ দালাল ক্রিশ্চিয়ান মিশেল। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
নীল শার্টের উপর নীল জ্যাকেট। স্মিত হাসি নিয়ে পাটিয়ালা কোর্টের ছয় নম্বর ঘরে নীল চোখের যে বিদেশি আধ ঘণ্টা চুপ করে বসে রইলেন, তাঁর নাম ক্রিশ্চিয়ান মিশেল। রাহুল গাঁধীর লাগাতার রাফাল-আক্রমণের হামলার আঁচ থেকে বাঁচতে যিনি এখন নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা হাতিয়ার।
রাজস্থানের ভোটমঞ্চে সে কথা গোপনও করেননি প্রধানমন্ত্রী। সরাসরি সনিয়া গাঁধীর নাম নিলেন। আর নাম না করে রাহুল গাঁধী, রবার্ট বঢরা, পি চিদম্বরমকে আক্রমণ করলেন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে। অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড চপার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ব্রিটিশ দালাল ক্রিশ্চিয়ানকে দুবাই থেকে কাল রাতে দেশে আনার পুরো কৃতিত্ব নিলেন। আর বুক বাজিয়ে আগাম জানালেন মিশেল কী করতে পারেন, ‘‘এই ব্রিটিশ নাগরিক নামদারদের (রাহুলকে এই নামেই ডাকেন মোদী) বন্ধুদের কমিশন দিতেন। গোটা পরিবার ভয়ে কাঁপছে! নাম যখন বেরোবে, জানি না কতদূর পৌঁছবে? এক চা-ওয়ালার শক্তি দেখেছেন?’’
তার পর সেই ‘শক্তি’ জাহির করে মোদী একে একে দাবি করেন, হেরাল্ড মামলা থেকেও ‘মা-বেটা’ রেহাই পাবেন না, জেলে যাবেন চিদম্বরমও। তার পরেই নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘‘মোদী এমন খেল খেলেছে, এমন চাল চেলেছে, সব দুর্নীতি খুঁজে সকলকে আদালতের দোরগোড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।’’ আর তেলঙ্গানায় রাহুল গাঁধী উল্টে স্মরণ করালেন রাফালের কথা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলুন, রাফালে অনিল অম্বানীকে কেন ৩০ হাজার কোটি দিয়েছেন।’’ রাহুলের দলের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, ‘‘ইউপিএ সরকারই অগুস্তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। মোদী আসার পরেই তাদের কালো তালিকা থেকে সরিয়েছেন। তাঁর ভূমিকা নিয়েই তদন্ত হোক।’’ আর এক নেতা সলমন খুরশিদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী নীরব মোদী, বিজয় মাল্য, মেহুল চোক্সীদের ভারতে আনতে এত তৎপর নন কেন?’’
আরও পড়ুন: ‘প্রশ্ন শুনুন, ভালই লাগবে’, মোদীকে খোঁচা রাহুলের
কংগ্রেস অবশ্য অস্বস্তিতে পড়েছিল, যখন আজ আদালতে মিশেলের হয়ে ওকালতি করতে পৌঁছে যান যুব কংগ্রেসের আইনি বিভাগের প্রধান আলজো কে জোসেফ। সিবিআই ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের দাবি করলে বিচারবিভাগীয় হেফাজতের দাবি করেন জোসেফ। কিন্তু সিবিআই আদালতকে জানায়, অগুস্তা চুক্তিতে বিদেশি অভিযুক্ত এবং তাদের ভারতীয় যোগাযোগ সবিস্তার জানতে মিশেলকে হেফাজতে প্রয়োজন। আর শুধু রাজনৈতিক-ই নয়, মিশেল রাফাল ঠেকাতে অগুস্তা
প্রতিরক্ষা এবং বায়ুসেনার বিভিন্ন স্তরে কাজকারবার চালিয়েছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও তাঁকে পাচার করা হত।
ইটালির আদালতের অগুস্তা-রায়ে মিশেলের ডায়েরির কয়েকটি পাতাও ছিল। সেই ডায়েরির ‘এন্ট্রি’ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, তিন কোটি ইউরো ঘুষ দিয়েছিলেন মিশেল। তার মধ্যে ৬০ লক্ষ বায়ুসেনার বিভিন্ন অফিসারকে, ৮০ লক্ষ আমলাদের, দেড় কোটির বেশি প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগীর পরিবারকে দেওয়া হয়েছিল। ডায়েরিতে উল্লিখিত ‘ফ্যাম’ নাকি ত্যাগীর ফ্যামিলি বা পরিবার, জেএস এয়ার জয়েন্ট সেক্রেটারি এয়ারফোর্স, বিইউআর-এর অর্থ ব্যুরোক্র্যাট বা আমলা। জোসেফের দাবি, এই ডায়েরি সম্পূর্ণ ভুয়ো। মিশেলের সঙ্গে সকাল-বিকেলে এক ঘণ্টা করে দেখা করার আবেদন করেন তিনি। আদালত তা মঞ্জুর করে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের রায় দেয়।
তত ক্ষণে বিজেপি বলতে শুরু করেছে, অগুস্তার দালালের কৌঁসুলি কংগ্রেসের পদাধিকারী! রাতেই জোসেফকে পদ থেকে সরিয়ে দল থেকেও বের করে দেয় কংগ্রেস। জানায়, দলের কথায় নয়, ব্যক্তিগত স্তরেই মিশেলের কৌঁসুলি হয়েছেন জোসেফ। জোসেফ নিজেও বলেন, ‘‘পেশা আর দল আলাদা।’’ কিন্তু বিজেপির নেতাদের দাবি, ‘‘আদালতের পরেই এআইসিসি দফতরে গিয়েছেন জোসেফ। কারণ, মিশেল মুখ খুললে সনিয়া গাঁধী, আহমেদ পটেলের নাম আসবে। মিশেল আর আদালতকে গাঁধী পরিবার বার্তা দিচ্ছে, সঙ্গে আছি।’’ ‘আর্থিক লেনদেনের’ অতিরিক্ত তথ্য দিতে আসরে নামে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী অগুস্তা নিয়ে যতটা সক্রিয়, রাফাল নিয়ে নন কেন?
নরেন্দ্র মোদীর তো নাম আছে সহারা-বিড়লা ডায়েরিতেও। তার তদন্ত হচ্ছে না কেন?’’