নরেন্দ্র মোদী ও শি চিনফিং। ফাইল চিত্র।
উহানের পর এ বার মমল্লপুরম। ভারত-চিন ঘরোয়া সংলাপের দ্বিতীয় সংস্করণ।
আজ দুপুরে চব্বিশ ঘণ্টার সফরে চেন্নাই হয়ে মমল্লপুরমে পৌঁছবেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে খোলামেলা পরিবেশে সংলাপই এই সফরের সারকথা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে সংঘাতহীন রাখতে আরও আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ, সন্ত্রাস এবং পরিবেশ দূষণ দমনে বাড়তি সহযোগিতা, সর্বোপরি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের ঘাটতি কমানোর বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন মোদী। চেষ্টা করা হচ্ছে আলোচনাকে কাশ্মীর-কেন্দ্রিকতা থেকে বের করে আনতে।
তবে গত কাল রাত পর্যন্ত চলেছে টানাপড়েন। বেজিঙে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকের পর শি তো বলেইছেন, যৌথ বিবৃতিতেও চিন-পাকিস্তানকে কাঁধে কাঁধ মেলাতে দেখা গিয়েছে কাশ্মীর প্রশ্নে। ভারতে আসার ৪৮ ঘণ্টা আগে শি-র বক্তব্য, পাকিস্তান যেগুলিকে মূল বিষয় বলে মনে করে, তার প্রতি চিনের সমর্থন রয়েছে এবং কাশ্মীরের দিকে চিন নজর রেখেছে।
সূত্রের মতে, মমল্লপুরমে কাশ্মীর নিয়ে দিল্লি কথা বলতে না চাইলেও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রভাব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পড়বে কি না, তা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলবেন শি। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের এটাও মত যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতকে চাপে রাখতে পাকিস্তান তাস খেলে বেজিং। ফলে আগামী দু’দিন কাশ্মীরকে এড়িয়ে চলা যাবে কিনা সন্দেহ।
তবে এ নিয়ে সংঘাত এড়ানোই লক্ষ্য সাউথ ব্লকের। বরং মমল্লপুরমের সংলাপকে অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রশ্নে কার্যকর করে তুলতে কোমর বাঁধছে তারা। ২০১৮-র এপ্রিলে উহান বৈঠকের পরে মোদীর অনুরোধে ভারত থেকে চাল ও চিনি আমদানি বাড়িয়েছে বেজিং। তা সত্ত্বেও এখনও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের ঘাটতি ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল ঘাটতি কমাতে চিনের বাজার ভারতীয় পণ্যের জন্য খুলে দিতে শি-কে অনুরোধ জানাবেন মোদী।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখা নিয়ে শেষ আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কূটনৈতিক বাস্তবতার বদল ঘটেছে। সূত্রের মতে, আসন্ন সংলাপে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। চিন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের কী প্রভাব ভারত-চিন সম্পর্কে পড়তে পারে তা-ও আলোচনায় উঠে আসবে।
চিনের উপ বিদেশমন্ত্রী লুয়ো ঝোহুই এ দিন বলেন, ‘‘দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের চেষ্টায় একটি শক্তিশালী মঞ্চ তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করি চিনা প্রেসিডেন্টের সফর সফল হবে এবং ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন দিশা পাবে।’’ চিনের সরকারি সংবাদপত্রও বলেছে, ‘অতীতের মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে এগিয়ে চলার দিশা খোঁজাই শি-র সফরের লক্ষ্য’।
শনিবার তাজ ফিশারম্যানস কোভ রিসর্টে প্রথমে দুই শীর্ষ নেতা বৈঠক করবেন। তার পর বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে কথা বলবেন চিনা কমিউনিস্ট পার্টির দুই শীর্ষ নেতা ইয়াং জিয়েচি এবং ওয়াং ই। শনিবার চেন্নাই থেকে নেপাল রওনা হবেন শি।