নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
যত দিন যাচ্ছে, টিকাকরণে নিজের লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে দিচ্ছে মোদী সরকার নিজেই।
সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র হলফনামা দিয়ে বলেছিল, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সকলের দু’ডোজ় টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত শুক্রবারই সংসদে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া জানান, নির্দিষ্ট সময়ের (ডিসেম্বরের) মধ্যে দেশের সবাইকে টিকা দেওয়া যাবে কি না, তা এখনই বলা অসম্ভব। তার এক দিনের মধ্যে, শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সকলে অন্তত এক ডোজ় করে কোভিডের টিকা পেয়ে যাবেন।
রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর রেডিয়ো-বার্তা ‘মন কি বাত’-এ ফের মনে করিয়েছেন, টিকা না-নিলে বিপদ হতে পারে। সকলকে টিকা নেওয়ায় উৎসাহ দিতে প্রধানমন্ত্রী নিজের ও তাঁর একশো বছর ছুঁইছুঁই মায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, তাঁরা দু’জনেই দু’ডোজ় টিকা নিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, টিকা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী সবাইকে টিকা নিতে বলছেন। অথচ টিকার অভাবে দৈনিক টিকাকরণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের টিকাকরণ দরকার। ডিসেম্বরের মধ্যে তা করে ফেলতে হলে প্রতিদিন ৯৩ লক্ষ ডোজ় টিকা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩৬ লক্ষ ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে। শনিবার সারা দিনে মাত্র ২৩ লক্ষ ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এ দিকে ইঙ্গিত করে আজ কটাক্ষ করেছেন, ‘‘দেশের মন কি বাত বুঝলে টিকাকরণের এই হাল হত না।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, এ বছরের মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সকলের টিকাকরণ হয়ে যাবে। এখন তাঁর সরকারেরই মন্ত্রী পীযূষ গয়াল তা সংশোধন করে বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় সকলে এক ডোজ় টিকা পেয়ে যাবেন।’’ সিপিএম নেতার বক্তব্য, এখন যদি সরকার দিনে ৪০ লক্ষ টিকা দেয়, তা হলে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সেটা বাড়িয়ে ১ কোটিতে নিয়ে যেতে হবে।
দৈনিক ১ কোটি ডোজ় টিকা দেওয়ার অর্থ, মাসে ৩০ কোটি ডোজ় টিকা দেওয়া। আগে মোদী সরকার সেই হারেই টিকাকরণ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু গয়াল জানিয়েছেন, এখন মাসে ১২ কোটি টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী এক-দু’মাসে তা বেড়ে ১৫ কোটিতে পৌঁছবে। বছরের শেষে তা সম্ভবত ২০ কোটি ছোঁবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ ‘মন কি বাত’-এ বলেন, করোনা এখনও বিদায় নেয়নি। তাই কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা নিয়ে দ্বিধা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি নিজে দু’ডোজ় টিকা নিয়েছি, আমার একশো ছুঁইছুঁই মা দু’ডোজ় টিকা নিয়েছেন। কখনও হালকা জ্বর আসছে।
তবে খুব সামান্য, কয়েক ঘণ্টার জন্য। টিকা না-নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।’’ ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী, টিকা কোথায়? গত ছয় মাসে ১৮ বছরের বেশি বয়সি জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও কম মানুষের টিকাকরণ হয়েছে। বাজেটে টিকার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। খরচ হয়েছে মাত্র ৯৭২৫ কোটি টাকা। তিন ভাগের এক ভাগেরও কম।’’
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর ‘মন কি বাত’-এ দেশভক্তির কথা বলেছেন। কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে সকলকে কার্গিল যুদ্ধের কথা পড়তে বলেছেন। ১৫ অগস্ট দেশ স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে পা রাখতে চলেছে। টোকিও অলিম্পিক্সে যাওয়া ক্রীড়াবিদদের জন্য গর্বিত হয়ে, তাঁদের সমর্থন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।