ফাইল চিত্র।
আঙুল উঠছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রতারণার পরে মোদীর সঙ্গে মেহুল চোক্সীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিল। এবার দেশের সবথেকে বড় ব্যাঙ্ক প্রতারণা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ঋষি আগরওয়ালের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সেই কারণেই কি রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাঙ্ক ও সিবিআই সক্রিয় হতে দেরি করেছে?
এই প্রশ্নের মুখে আজ খোদ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে সরকারের হয়ে মাঠে নামতে হয়েছে। নির্মলার দাবি, এ ক্ষেত্রে তিনি ব্যাঙ্ককে কৃতিত্বই দিতে চান। কারণ, সাধারণত এই ধরনের প্রতারণা চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করতে ব্যাঙ্কের ৫২ থেকে ৫৬ মাস সময় লেগে যায়। আজ বাজেটের পরে নিয়ম মাফিক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করে নির্মলার অভিযোগ, ইউপিএ সরকারের আমলেই স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ ২৮টি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ২২,৮৪২ কোটি টাকার ঋণ অনাদায়ী ঋণে পরিণত হয়েছিল।
শনিবার সিবিআই এবিজি গোষ্ঠীর সংস্থা এবিজি শিপইয়ার্ডের বিরুদ্ধে ২২,৮৪২ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছে। গুজরাতের দহেজ ও সুরাতে এই সংস্থার কারখানা রয়েছে। সিবিআইয়ের এফআইআর-এ মূল অভিযুক্ত ঋষি কমলেশ আগরওয়াল। যিনি বেশ কয়েক বছর আগেই সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়ে ভারত ছেড়েছেন বলে সিবিআই সূত্রের বক্তব্য।
গুজরাতের কংগ্রেস নেতা শক্তিসিন গোহিলের অভিযোগ, ঋষি আগরওয়ালকে বরাবরই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ শিল্প সম্মেলনে দেখা যেত। ২০১৩-তে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মোদীর দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময়ে প্রতিনিধি দলেও ছিলেন তিনি। ঋষি এখন দেশের ইতিহাসে ২২,৮৪২ কোটি টাকার বৃহত্তম ব্যাঙ্ক প্রতারণায় মূল অভিযুক্ত। তাঁর স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ২০০ কোটি টাকাও নয়।
কংগ্রেস আজ প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী কেন নীরব? কেন ঋষি আগরওয়ালকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি? তিনি কোন দেশের নাগরিক? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানে কেন এবিজি-র প্রতারণার তথ্য নেই? কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নীরব দর্শক হয়ে বসে রয়েছে? চার বছর আগে, ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস এবিজি শিপইয়ার্ডের প্রতারণা নিয়ে সরব হলেও কেন মোদী সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি?
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এবিজি শিপইয়ার্ডের ঋণকে অনাদায়ী ঋণ বা এনপিএ বলে তালিকাভুক্ত করা হয় ২০১৬-তে। ফরেন্সিক অডিটের ভিত্তিতে ২০১৯-এর জুনে এই ঋণকে ‘প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। তারও পরে নভেম্বরে স্টেট ব্যাঙ্ক প্রথমবার সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, সিবিআই তার পরে এফআইআর দায়ের করতে দেড় বছর দেরি করল কেন? কেন ২০১৯-এর নভেম্বরে অভিযোগ পেয়ে ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে এফআইআর দায়ের হল? সিবিআই সূত্রের যুক্তি, স্টেট ব্যাঙ্ক প্রথমে যে অভিযোগ দায়ের করেছিল, তাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল না। ২৮টি ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেনি এবিজি। সেই অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু স্টেট ব্যাঙ্ক সিবিআইকে অভিযোগ জানানোর আগে বাকি ব্যাঙ্কের
অনুমতি নেয়নি। সিবিআই আরও নথি চাওয়ার পরে স্টেট ব্যাঙ্ক ২০২০-র অগস্টে দ্বিতীয় বার অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু তার পরেও কেন সিবিআইয়ের এফআইআর দায়ের করতে ১৭ মাস সময় লাগল, তা নিয়ে তদন্তকারী কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
আজ কংগ্রেসের মুখপাত্র গৌরব বল্লভের প্রশ্ন, ‘‘প্রথমবার অভিযোগ দায়েরের পরে কেন মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রক, স্টেট ব্যাঙ্ক ও সিবিআই ফাইল চালাচালি করতে ও একে অপরের নথি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দু’বছরের বেশি সময় লাগিয়ে দিল?’’ তাঁর বক্তব্য, মোদী জমানার সাড়ে সাত বছরে ব্যাঙ্ক প্রতারণার অঙ্ক ৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যার অর্থ, প্রতিদিন গড়ে ব্যাঙ্কের ১৯৫ কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, মাত্র ০.৭ শতাংশ অর্থ উদ্ধার করা গিয়েছে। নীরব মোদী, মেহুল চোক্সী, প্রধানমন্ত্রী যাঁকে ‘হমারে মেহুল ভাই’ বলেছিলেন, ললিত মোদী, বিজয় মাল্য, যতীন মেহতা, চেতন ও নীতিন সন্দেসেরার তালিকাতেই ঋষি আগরওয়াল এবার নতুন নাম।