জি-৭ ঘোষণাপত্রে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি খোঁচা রয়েছে চিনের প্রতিও। ছবি পিটিআই
দিল্লিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তৃতা লাগাতার সমাজমাধ্যমে তুলে ধরতেন সাংবাদিক মহম্মদ জ়ুবের। ২০১৮ সালে করা জ়ুবেরের এক টুইটের প্রেক্ষিতে অন্য একটি টুইটার হ্যান্ডল থেকে করা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে সোমবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। যে ঘটনায় প্রতিশোধের রাজনীতির ছায়া দেখছেন বিরোধীরা। আর তার একটু পরেই সুদূর জার্মানিতে বসে জি-৭ গোষ্ঠীভূক্ত রাষ্ট্র এবং আরও চার আমন্ত্রিত দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে, ‘বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার’ পক্ষে এক বিস্তারিত বিবৃতিতে সই করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গোটা বিষয়টিকে এক বন্ধনীতে রেখে বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন রাখতে মোদী সরকারের এই দ্বিচারিতা। অভিযোগ, তারা দেশে গত কয়েক বছরে গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেছে। জ়ুবেরের ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র। এমন ঘটনা অসংখ্য। আলোচনা, মতামত প্রকাশের মুক্ত পরিসরই আজ উধাও। সোমবার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিন্হা মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে এই মর্মে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস, ডিএমকে, তৃণমূল কংগ্রেস, বাম নেতারা।
এদিকে জি-৭ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরে যে যৌথ বিবৃতিটি আজ প্রকাশ করা হয় তার নাম – ‘২০২২, এক জাগ্রত গণতন্ত্রের বিবৃতি।’ যে বিবৃতিটিতে অন্য দেশের সঙ্গে ভারতও সই করেছে তাতে বলা হয়েছে, ‘‘অনলাইন এবং অফলাইন, উভয় ক্ষেত্রেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীন ও মুক্ত রাখার জন্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিয়েও কথা হয়েছে।’’ নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা এবং বৈচিত্রকে টিকিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। বক্তব্য, ‘‘উদার ও মুক্ত নাগরিকপরিসরের ভিত তৈরি করে গণতন্ত্র। রাজনৈতিক কার্যকলাপে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ায়। আর তার পরিণামে উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধ, সবই বাড়ে।’
জি-৭ ঘোষণাপত্রে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি খোঁচা রয়েছে চিনের প্রতিও। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের শাসন মেনে প্রত্যেকটি দেশের উচিত অন্যের ভৌগোলিক অখণ্ডতা যাতে বজায় থাকে সেদিকে সতর্ক এবং যত্নবান থাকা। বিশ্বের অন্যতম ধনী ৭টি দেশের এই বিবৃতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। চিন এই গোষ্ঠীতে নেই। আমেরিকা এবং ব্রিটেন ছাড়াও রয়েছে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি এবং জাপান। যে পাঁচটি দেশ এ বারের সম্মেলনে আমন্ত্রিত তার মধ্যে ভারত ছাড়াও ছিল আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।