রবিবার তাঁর ভাষণের শেষের দিকে আসে ঋষি অরবিন্দের প্রসঙ্গ।
বঙ্গভোটের আগে বঙ্গমনীষীর প্রশস্তি শুধু নয়, পুরো দু’লাইন বাংলা কবিতাও ‘মন কি বাত’-এ পড়ে শোনালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রবিবার তাঁর ভাষণের শেষের দিকে আসে ঋষি অরবিন্দের প্রসঙ্গ। মোদী বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর শ্রী অরবিন্দের মৃত্যুবার্ষিকী। অরবিন্দের লেখা যত বেশি পড়া যাবে, ততই আমাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে যাবে। তরুণ প্রজন্ম যত বেশি অরবিন্দ সম্পর্কে জানবে, ততই তারা কিছু শিখতে পারবে। নিজেদের জ্ঞানের ভাণ্ডার তত বাড়বে’। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘ঋষি অরবিন্দের দেখানো পথে এগলে নতুন রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে’। সেই সঙ্গে কৌশলে মোদী সরকারি প্রকল্পের সঙ্গেও জুড়ে দেন অরবিন্দের দর্শন। বলেন, ‘আমরা যখন ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর প্রচার নিয়ে এগোচ্ছি, তখন অরবিন্দের স্বদেশি দর্শন আমাদের পথ দেখাচ্ছে’।
এর পর ১৯ শতকের কবি মনোমোহন বসুর একটি কবিতা থেকে দু’টো লাইন বাংলায় পড়ে শোনান। বলেন, ‘বাংলায় বিখ্যাত এক কবিতা আছে— “ছুঁই সূতো পর্যন্ত আসে তুঙ্গ হ’তে, দীয়াশলাই কাটি, তাও আসে পোতে, প্রদীপটি জ্বালিতে, খেতে, শুতে, যেতে, কিছুতেই লোক নয় স্বাধীন!’’এর পর হিন্দিতে তর্জমা করে মোদী বলেন, ‘অর্থাৎ, সুচ-সুতো থেকে দেশলাই কাঠি সবই আসত বিদেশ থেকে। খাওয়া, জল পান করা, এমনকি ঘুমনোতেও স্বাধীনতা ছিল না। আমরা স্বদেশী বলতে বোঝাতে চাইছি, ভারতে তৈরি, ভারতীয়দের তৈরি জিনিস ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে’। এর পরই তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি, ‘তার মানে এই নয় যে অরবিন্দ বিদেশ থেকে কিছু শেখার বিপক্ষে ছিলেন। আমরাও বলছি, সব জায়গা থেকে নতুন কিছু শিখব। কিন্তু এর পর আমার দেশের জন্য যা ভাল, তাকে সমর্থন করব এবং তাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করব। এই হল আত্মনির্ভর ভারতের ভোকাল ফর লোকাল-এর মন্ত্র’। এই প্রসঙ্গে ঋষি অরবিন্দের স্বদেশি এবং শিক্ষা নিয়ে বইও দেশবাসীকে পড়ার কথা বলেন মোদী।
আরও পড়ুন: হায়দরাবাদের নাম বদলে ভাগ্যনগর রাখার দাবি তুললেন যোগী
প্রসঙ্গত, এর আগেও স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে অরিবন্দের প্রসঙ্গ এনেছিলেন মোদী। তবে, আজ রবিবার তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে যতটা সময় তিনি অরবিন্দ নিয়ে বললেন এবং মনোমোহন বসুর লেখা কবিতা শোনালেন বাংলা ভাষায়, তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: গজনিতে গাড়িবোমা বিস্ফোরণ, নিহত ২৬ আফগান সেনা
২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে ‘জাতীয় ছুটি’র দিন ঘোষণার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে মোদীকে তিনি অনুরোধ করেন, নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। মমতার অভিমত, নেতাজির জন্মদিন গোটা দেশেই মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। তাই ওই দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করা উচিত। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী যাতে ওই বিষয়ে ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ উদ্যোগী হন, সে অনুরোধও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরই মোদীর মুখে বাংলার আর এক গর্বের মুখ ঋষি অরবিন্দকে নিয়ে এত সময় ব্যয় করা এবং বাংলায় কবিতা শোনানো যথেষ্ট অর্থপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। ভোটের আগে বাংলাতে ভিন রাজ্যের নেতাদের এনে বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল, তার বিরুদ্ধেও এর মধ্যে দিয়ে একটি ‘বার্তা’ দেওয়া হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।