ফাইল চিত্র।
‘আপদা মে অবসর’!
সঙ্কটকে কাজে লাগিয়েই উন্নতি করার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরই ব্যবহৃত বাক্যবন্ধ।
আজ যেন নিজের আপ্তবাক্য মেনে চলেই নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশে প্রচারে গিয়ে দাবি করলেন, তাঁর আমলে ভারতের ক্ষমতা বেড়েছে। সে কারণেই ইউক্রেন থেকে ভারতীয় পড়ুয়া ও নাগরিকদের উদ্ধার করে আনা সম্ভব হচ্ছে। মোদীর এই দাবির পরে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের বিপদের সুযোগে উত্তরপ্রদেশের ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন। ‘আপদা মে অবসর’ খোঁজার চেষ্টা করছেন।
কংগ্রেসের রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য, ‘‘ভারত কোনওদিনই নিজের নাগরিকদের পরিত্যাগ করেনি। বরাবরই তাঁদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করেছে। ১৯৯০-এ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ে দেড় লক্ষের বেশি মানুষকে কুয়েত থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ২০০৬-এ লেবানন থেকে ২,৩০০ জন, ২০১১-য় লিবিয়া থেকে ১৫ হাজার ভারতীয়কে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু কোনও প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে ভোটে প্রচার করতে যাননি। প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত, নাগরিকদের উদ্ধার করাটা তাঁর দায়িত্ব, প্রচারের
কৌশল নয়।’’
আজ তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় দিল্লিতে অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকার পড়ুয়াদের ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে। রাশিয়া যখন থেকে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ শুরু করেছে, তখন থেকেই সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। খড়্গেরও একই মত। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীরা সঙ্কটের সময়ে সুযোগ খুঁজতে ও প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয়
উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে রাহুল গান্ধী ইউক্রেনের বিষয়ে সরব হবেন।
বিরোধীদের আক্রমণ সত্ত্বেও প্রচারে অবশ্য ইতি পড়েনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউক্রেনের পড়ুয়াদের নিয়ে ছ’টি বিমান দেশে পৌঁছেছে। --তাঁরাও সেখানে ইউক্রেন থেকে বহু কষ্টে সীমান্ত পেরিয়ে এসে পৌঁছনো পড়ুয়াদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর গুণগান করেছেন।
বিদেশ মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, ইউক্রেনে অন্তত ২০ হাজার ভারতীয় ছিলেন। এখনও পর্যন্ত ১৭ হাজারের কাছাকাছি ভারতীয় ইউক্রেন থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। রাশিয়ার হামলার পরে ‘অপারেশন গঙ্গা’ উদ্ধার অভিযানে ৩,৩৫২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। মোট ১৫টি বিমান ভারতে এসেছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ১৫টি বিমানে করে ভারতীয়দের ফেরানো হবে। বিদেশ মন্ত্রকের
দাবি, প্রধানমন্ত্রী নিজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তারই ফল হল রাশিয়া এখন ভারতীয় পড়ুয়াদের ‘সেফ প্যাসেজ’ দিচ্ছে।
মোদী আজ সোনভদ্রে প্রচারে গিয়ে বলেন, ‘‘দুনিয়ার পরিস্থিতি কী হয়েছে, তা আপনারা দেখছেন। ভারতের ক্ষমতা বেড়েছে বলেই আমরা ইউক্রেন থেকে নাগরিক, পড়ুয়াদের উদ্ধার করতে এত বড় অভিযান চালাতে পারছি। আমি নিজের চার মন্ত্রীকে পাঠিয়েছি।’’ রবিবারও মোদী উত্তরপ্রদেশে প্রচারে গিয়ে অপারেশন গঙ্গা-র বড়াই করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাশিয়ার হামলায় এক ছাত্রের মৃত্যুর পরে সরকার অস্বস্তিতে পড়ে। আজ মোদী বলেন, ‘‘আমি দেশের মানুষকে ভরসা দিচ্ছি, ভারত সরকার নাগরিকদের
ফেরাতে কোনও প্রয়াস বাকি রাখবে না।’’ মোদী বলেন, ‘‘ভারতকে আরও ক্ষমতাশালী করতে হবে। ঘোর পরিবারবাদীরা সে কাজ করতে পারবে না।’’ রাহুল গান্ধী পাল্টা আক্রমণে সরকারকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ‘‘পড়ুয়াদের মৃত্যুর মতো ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি রুখতে সরকার উদ্ধারকাজের বিস্তৃত তথ্য জানাক। পড়ুয়াদের উদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার।’’